চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র ক্যাটালগ পদে নিয়োগ পেয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান বাবু। এই নিয়োগ বহাল রাখতে জেলা জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য প্রফেসর ড. পেয়ার আহমেদ।
Advertisement
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান বাবুর নিয়োগকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সর্বত্রই প্রশ্ন- একজন পদধারী ছাত্রলীগ নেতা কীভাবে এখনো এই পদে বহাল রয়েছেন?
অভিযোগ রয়েছে এই নিয়োগের পেছনে হাজীগঞ্জ উপজেলার এক জামায়াত নেতার আত্মীয়তার সূত্র রয়েছে। জামায়াতের ওই নেতা এবং জেলা পর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশ রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, মাহবুবুর রহমান বাবু নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাজীগঞ্জ উপজেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের জেলা সাধারণ সম্পাদক। জুলাই আন্দোলনে ছাত্রলীগের হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ৫ আগস্টের (২০২৪) পর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দলীয় পদে থাকা সত্ত্বেও গত ১৭ মার্চ চাবিপ্রবি ভিসি তাকে পূর্বের তারিখ দেখিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে এই নিয়োগ দেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
Advertisement
তার এই ক্ষমতা ও শক্তির উৎস হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে হাজীগঞ্জ উপজেলার এক জামায়াত নেতার আত্মীয়তার সূত্র। জামায়াতের ওই নেতা এবং জেলা পর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশ থাকায় সপদে আজও বহাল রয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান বাবু। এমন অভিযোগ করেছেন একই পদে আবেদনকৃত একাধিক চাকরি প্রার্থী।
একই পদে আবেদনকৃত চাকরি প্রার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা হয়েও সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে শুধুমাত্র জামায়াত নেতার আত্মীয় পরিচয়ে এবং সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে বহাল রয়েছেন। আমরা যারা চাকরি প্রার্থী রয়েছি, আমাদের কারো পক্ষে বিএনপি-জামায়াতের আত্মীয়তার পরিচয় এবং সুপারিশ না থাকায় বিবেচনার বাইরে রয়েছি। অবিলম্বে এই চিহ্নিত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে মাহবুবুর রহমান বাবু তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, কেউ আপনাদের ভুল তথ্য দিচ্ছে।
ছাত্রলীগের ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের পদে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ব্যাকগ্রাউন্ড মাদরাসার। এই ব্যাকগ্রাউন্ডে বিগত ১৫ বছরে কেউ চাকরি পেয়েছে কি না তা আপনার কাছে প্রশ্ন রাখছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি তথ্য সত্য নয়। চাকরির জন্য অনেকেইতো বিভিন্ন পদ ব্যবহার করেন এবং ছবি তোলেন।
Advertisement
এ বিষয়ে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. পেয়ার আহমেদ বলেন, মূলত তার নিয়োগ হয় (ছয় মাসের জন্য) সাবেক ভিসির সময়ে। বর্তমানে সে কর্মরত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার যে অভিযোগ রয়েছে তার সত্যতা আমি পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো সিন্ডিকেট গঠন হয়নি, সিন্ডিকেট গঠন হলে তার বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে এবং এর সত্যতা নিশ্চিত হলে সিন্ডিকেট যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি জামায়াতের একজন নেতা আমাকে ফোনে জানান। পরবর্তীতে ওই একই নেতা ছাত্রলীগের সঙ্গে তার সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান এবং তার চাকরির বিষয়টি দেখার জন্য বলেন। এখন আমাদের কাছে কিছু তথ্য ও ছবি এসেছে, সেগুলো তদন্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে চাঁদপুর জেলা জামায়াতের আমির বিল্লাল হোসেন মিয়াজী জাগো নিউজকে জানান, মাহবুবুর রহমান বাবু ছাত্রলীগ করেছে কিনা জানা নেই। তার সঙ্গে পূর্বের কিছু ছবি থাকতে পারে, সেটা ওই সময় কৌশলগত কারণেও হতে পারে। আর তার চাকরি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হয়েছিল। আমি কেন তার চাকরির বিষয়ে সুপারিশ করবো। জামায়াতকে জড়িয়ে যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এটা সত্য নয়।
শরীফুল ইসলাম/এফএ/জিকেএস