নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
Advertisement
রোববার (১১ মে) দুপুরে সুবর্ণচর উপজেলা মিলনায়তনে পানির সংকট নিরসনে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের কথা শুনেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলমসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
মতবিনিময় সভায় ক্ষুব্ধ কণ্ঠে কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরেন এলাকার বাসিন্দারা। সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্ণচরে ছিল পানির ভাণ্ডার। খাল-বিল-ডোবায় ভরপুর ছিল এই জনপদ। কৃষি আঁতুড় ঘর বলা হয় সুবর্ণচরকে। কখনো ভাবিনি যে একদিন সুপেয় পানির জন্য হাহাকার হবে। সকালে উঠেই পরিবারের সদস্যদের পানির তৃষ্ণা মেটাতে যুদ্ধ করতে হয়। কোথাও একটু খাবার পানি দেখলেই, মনে হয় যেন শত সাধনার ফল পেলাম।’
Advertisement
কৃষক, এনজিও প্রতিনিধি, পরিবেশবিদ, শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বোরো আবাদে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়াই এই সংকটের প্রধান কারণ। গত চার-পাঁচ বছর ধরে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার চলছে। দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তাই এ ক্ষেত্রে বিকল্প উৎসের ব্যবস্থা করা না গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এখনি সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে সুপেয় পানির অভাবে উপকূলের মানুষ এলাকা ছাড়বে।
বক্তারা সুবর্ণচরকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা, বিশেষ পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া, উপকূলীয় সব মানুষের জন্য পানযোগ্য পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
পরিবেশকর্মী ও চন্দ্রকলির নির্বাহী পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, মাত্র চার-পাঁচ বছর আগেও সুবর্ণচরে এমন চিত্র ছিল না। তখন এলাকায় বোরো চাষ হতো কম। বেশির ভাগ মানুষ রবি শস্য উৎপাদন করতো, তাতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার তেমন ছিল না। কৃষি কাজের জন্য ২৪৫টি সেচ পাম্পের অনুমতি থাকলেও অপরিকল্পিতভাবে বসানো হয়েছে আরও তিন হাজারের বেশি সেচ পাম্প। এতে দিনদিন ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বেড়েছে।
উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন নোয়াখালীর সভাপতি আবদুল বারি বাবলু বলেন, এক দিকে বোরো ধানে পানি ব্যবহার হচ্ছে অন্যদিকে উপজেলা অর্ধশত ইটভাটায় পানি যাচ্ছে। ভূগর্ভের পানির সংকট দেখা দিলে ভবিষ্যতে পানিতে লবণাক্ততা বাড়বে। সুবর্ণচরে পানির উৎস হতে পারে মেঘনার শাখা নদী। এই নদীকে সেচের আওতায় আনা যেতে পারে। দখল হয়ে যাওয়া অসংখ্য খালবিল উদ্ধার করতে হবে।
Advertisement
স্থানীয় এনজিও সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মেঘনার খাল পুনঃখনন, স্লুইচ গেইট নির্মাণ, পুকুর-দিঘি খনন করে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ করতে হবে। একইসঙ্গে পানির সংকট মোকাবিলায় ধান চাষের বিকল্প ডাল জাতীয় শস্য উৎপাদন করার পরামর্শ দেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় স্থানীয় মানুষের কথা শোনার পর পানির সংকট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান।
তারা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তারা সুবর্ণচরে এসেছেন। পানির বিকল্প উৎসগুলো তারা সরেজমিন দেখেছেন। খাল খনন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, মেঘনা নদীকে সেচের আওতায় আনাসহ সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে কৃষিও টিকে থাকে, সুপেয় পানিরও অভাব না হয়।
এদিকে শনিবার ও রোববার দুই সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পানি সংকটাপন্ন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। পানির উৎস নদী ও খাল পরিদর্শন করেন। তারা দখল হয়ে যাওয়া নদী ও খাল উদ্ধারে জোর দেন।
ইকবাল হোসেন মজনু/এমএন/এএসএম