জাতীয়

সরকারি সেবা নিয়ে অভিযোগ-দুর্নীতির তথ্য জানাতে নতুন ব্যবস্থা

সরকারি সেবা নিয়ে অভিযোগ-দুর্নীতির তথ্য জানাতে নতুন ব্যবস্থা

সরকারি কোনো দপ্তরে সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তি, অসন্তোষ, ক্ষোভ এমনকি দুর্নীতির তথ্য জানাতে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এখন জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে বিনা খরচে যে কেউ অভিযোগ ও অনিয়মের তথ্য জানাতে পারবেন।

Advertisement

এতদিন অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার (জিআরএস-গ্রিভেন্স রেড্রেস সিস্টেম) অধীনে অনলাইনে ওয়েবসাইট www.grs.gov.bd ও অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানানো যেত। এখন নতুন সিস্টেমে ফোন করেও যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারবেন।

সম্প্রতি অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থায় এটুআই-এর আওতাধীন টোল ফ্রি নম্বর ৩৩৩ যুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য। তবে এ বিষয়ে প্রচারণা না থাকায় সাড়া কম বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি কার্যক্রম আরও জনবান্ধব ও স্বচ্ছ করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং দুর্নীতি কমাতে নতুন এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। আগে থেকেই জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছিল। এখন সেখানে সরকারি দপ্তরের সেবা নিয়ে অভিযোগ জানানোর বিষয়টি যুক্ত করা হলো।

Advertisement

জিআরএসে অনেকেই অভিযোগ জানাতে পারেন না। কারণ এক্ষেত্রে অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে ঢুকে অভিযোগ জানাতে হয়। অনেকের স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার নেই, ইন্টারনেট সংযোগ নেই। তারা চাইলেও কোনো সেবা নিয়ে অভিযোগ বা দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য দিতে পারেন না। এখন তারা ফোন করে বিনা খরচে সেই কাজটি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অভিযোগ ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সুশাসন ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনা অধিশাখা) শাহানারা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ যাতে সেবা নিয়ে সহজে অভিযোগ জানাতে পারে সে জন্য নতুন একটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এখন যে কেউ ৩৩৩-এ ফোন করেও অভিযোগ জানাতে পারবেন। অনেকে হয়তো কম্পিউটার কিংবা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে জিআরএস সিস্টেমে অভিযোগ জানাতে পারেন না। তারাও চাইলে ৩৩৩-এ ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। এক্ষেত্রে ফোন করে অভিযোগ জানালে অপারেটর জিআরএস সিস্টেম ব্যবহার করে তার পক্ষ হয়ে অভিযোগ দাখিল করবেন। অভিযোগকারী তার ফোনে অভিযোগের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানতে পারবেন।

আরও পড়ুন: ৫০০ টাকা এসি মেরামতের বিলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তোলেন ২২ হাজার! দুর্নীতির শীর্ষে পাসপোর্ট-বিআরটিএ-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সরকারি গাড়ির অপব্যবহার-অনিয়ম রোধে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ

তিনি বলেন, ‘এ ব্যবস্থায় অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হলো। এভাবে ফোন করে অভিযোগ জানাতে কোনো খরচও হবে না। কারণ নম্বরটি টোল ফ্রি। কল সেন্টারের কর্মীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।’

যুগ্মসচিব বলেন, ‘এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো সরকারি কার্যক্রম যাতে আরও জনবান্ধব হয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে আরও জবাবদিহিতার আওতায় আসেন এবং দুর্নীতি যাতে আরও কমে আসে। সর্বোপরি জনবান্ধব প্রশাসন গড়তে এ পদক্ষেপ।’

Advertisement

ফোনে যেভাবে অভিযোগ জানাতে হবে

জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এ বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হয়। ৩৩৩-এ ফোন করার পর ২ প্রেস করে সামাজিক সমস্যা ও সরকারি সেবার বিষয়ে অভিযোগ জানানো যায়। ২-এ প্রেস করার পর একজন কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি ফোন ধরবেন। তাকে অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানালে তিনি জিআরএস সিস্টেমে প্রবেশ করে অভিযোগকারীর পক্ষে তার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অভিযোগ দাখিল করবেন। তবে কেউ মোবাইল নম্বর দিতে না চাইলে, সেটাও পারবেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি অভিযোগের অগ্রগতি জানতে পারবেন না।

এটুআইর (অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট) ন্যাশনাল কনসালটেন্ট (৩৩৩) দিদার-ই-কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমান জিআরএস প্ল্যাটফর্মে সরকারের প্রায় ২০ হাজার অফিস যুক্ত রয়েছে। কিন্তু সরকারি অফিস আছে প্রায় ৫০ হাজার। যে অফিসগুলো সংযুক্ত সেগুলো আমাদের প্রতিনিধি জিআরএস সিস্টেমে এন্ট্রি দেন। আমরা জিআরএসের সঙ্গে সংযুক্ত একটা কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস) করেছি। মূলত সামাজিক ও পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এখানে অ্যাড্রেস করা হয়। এ অভিযোগগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কাছে চলে যায়। সিএমএসের ফোকাল পয়েন্ট ইউএনওরা। তারা যে দপ্তরের সমস্যা তাদের মাধ্যমে সমাধান করে।’

তবে প্রচারণা না থাকায় ফোন করে অভিযোগ জানানোর সংখ্যা খুবই কম বলছেন এটুআই’র সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা বা জিআরএস

‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, ২০০০’-এর প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয়ভাবে অভিযোগ গ্রহণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করা হয়েছিল। এ সুপারিশের আলোকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটে কেন্দ্রীয়ভাবে জনসাধারণের অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র চালু করে। প্রাপ্ত অভিযোগগুলো প্রতিকারের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০০৭ সালে একটি পরিপত্র জারি করা হয়, যার আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগগুলো পাঠানো হয়। প্রাপ্ত অভিযোগের সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার স্বার্থে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১৫ সাল থেকে অনলাইন অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা (জিআরএস) চালু করে। ওই সময়ে ‘অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা-সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০১৫’ করা হয়। ২০১৮ সালে এটি সংশোধন করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে কেউ সরকারি কোনো সেবায় সন্তুষ্ট না হলে, সেবা নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে বা ক্ষোভ থাকলে জিআরএস সিস্টেমে অভিযোগ দাখিল করতে পারছে। অভিযোগ অনলাইনেই নিষ্পত্তি হয়। মোবাইল নম্বর দিয়ে অভিযোগ দাখিল করতে হয়। এ ব্যবস্থায় অভিযোগকারী নাগরিককে তার অভিযোগের বিষয়ে যে কোনো ধরনের অগ্রগতি বা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানানো হয় এবং কোনো বিষয়ে তার মতামত বা পরামর্শ মূল্যায়ন করা হয়। ই-মেইলের মাধ্যমেও অভিযোগ প্রতিকারের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়। এছাড়া লগইন করেও হালনাগাদ তথ্য জানা যায়।

যুগ্মসচিব শাহানারা বেগম বলেন, জিআরএস ওয়েবসাইট ও অ্যাপ রয়েছে। অভিযোগ দাখিলের ৩০ কর্মদিবস ও যদি তদন্ত লাগে তবে ৪০ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়। আপিলেরও সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলে যায়। তবে এটি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।’

যুগ্মসচিব বলেন, ‘আমরা মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন জেলায় সভা করছি। সবাই যাতে অভিযোগ জানায়, তারা যাতে এ প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে জানে- সেজন্য এগুলো করছি। কিছুদিন আগে কুমিল্লা, নোয়াখালীতে মিটিং করেছি সংশ্লিষ্টদের নিয়ে। এটা অব্যাহত আছে।’

আরও পড়ুন: এনআইডি সেবা নিয়ে এখনো স্বরাষ্ট্র-ইসি রশি টানাটানি সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের তথ্য জমা বাতিল হলে দুর্নীতি বাড়বে এটুআই প্রকল্পের অর্থ লোপাটে জয়-পলকের ‘সংশ্লিষ্টতা’

‘একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা প্রশিক্ষণও করাচ্ছি। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুশীল সমাজ, মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র প্রতিনিধি, সাংবাদিক, সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তাদের আমরা অভিযোগ করার ব্যবস্থাটি সম্পর্কে জানাচ্ছি। সিটিজেন চার্টার, কেউ সেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ হলে কীভাবে অভিযোগ দায়ের করবে, কার কাছে যাবে- এসব বিষয়ে জানানো হয়।’

শাহানারা বেগম আরও বলেন, ‘কেউ যদি নিজে না পারে তবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) গিয়ে জিআরএসে অভিযোগ জানাতে পারবে। কারণ দেশের ৬৪টি জেলায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সেবাদাতাদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন আমরা এটি ৩৩৩-এ যুক্ত করে অভিযোগ জানানোর বিষয়টি আরও সহজ করেছি।’

‘জিআরএসে মোবাইল নম্বর না দিয়ে আবেদন করলে তিনি আবেদনের অগ্রগতির কোনো তথ্য পাবেন না। তবে এভাবে আবেদন করা যায়। বেনামি কোনো অভিযোগের যদি কোনো ভিত্তি থাকে বা অভিযোগটি যতি গুরুতর হয়, তবে আমরা সেটি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’

ধর্মীয়, কোনো আদালতে বিচারাধীন, তথ্য অধিকার, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গৃহীত বিভাগীয় মামলা অথবা আইন বা বিধির আওতায় রিভিউ/আপিলের সুযোগ রয়েছে এরূপ বিষয়-সংশ্লিষ্ট অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না।

আরএমএম/এসএনআর/এমএমএআর/এমএফএ/এএসএম