দেশজুড়ে

প্রতিবন্ধী মেয়ের যত্নে ক্লান্তিহীন বৃদ্ধা মা

প্রতিবন্ধী মেয়ের যত্নে ক্লান্তিহীন বৃদ্ধা মা

মেয়ে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মায়েরও বয়স হয়েছে। তবুও মেয়ের সেবাযত্ন করে দিন পার করছেন বৃদ্ধ মা। প্রায় ২০ বছর আগে স্বামী মারা যান। এরপর থেকেই শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। প্রতিবন্ধী মেয়েকে আগলে দিন পার করছেন বৃদ্ধা আমেনা বেগম।

Advertisement

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর শহরের ২নং শকুনি এলাকার মান্নান হাওলাদারের সঙ্গে ১নং শকুনি এলাকার মৃত রশিদ তালুকদারের মেয়ে আমেনা বেগমের (৭০) প্রায় ৫০ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম হয়। ছোট মেয়ে ফাহিমা আক্তার (২৩) জন্মের কয়েক বছর পর হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক করে স্বামী মান্নান হাওলাদার মারা যান। এরপর থেকেই আমেনা বেগমের জীবন যুদ্ধ শুরু হয়। ছোট মেয়ে ফাহিমা জন্মের সময় সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। তবে তিন বছর বয়সে জ্বর হওয়ার পর তার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। যত বড় হতে লাগে সমস্যা ততটাই বাড়তে থাকে। বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজ দেখিয়েও ফাহিমার কোনো উন্নতি হয়নি। ধীরে ধীরে তার এক হাত ও পা বাঁকা হয়ে যায়। সঙ্গে ঘাড়ও বাঁকা হয়ে যায়। এছাড়াও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

জানা যায়, বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তারের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন আমেনা। এরপর ছেলে ওয়াদুদ হাওলাদার ও মুরাদ হাওলাদারও বিয়ে করে আলাদা সংসার শুরু করেন। ফাহিমা প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার বিয়ে হয়ানি। তাই প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে স্বামীর ভিটায় থাকেন তিনি। হাঁস, মুরগি ও ছাগল পালন করেন। সেই আয় ও ছেলেদের সহযোগিতায় মা ও প্রতিবন্ধী মেয়ের সংসার চলে। প্রতিবন্ধী মেয়েকে ছেড়ে তিনি কোথাও একদিন থাকতেও পারেন না। মেয়েকে খাইয়ে দেওয়া, গোসল করানো, চুল ঠিক করা, কাপড় পরানো, ওষুধ খাওয়ানো, রান্নাসহ যাবতীয় সব কাজ আমেনা বেগম নিজেই করেন।

বৃদ্ধ বয়সে যেখানে আমেনা বেগমের বিশ্রামে থাকার কথা, সেখানে তিনি নিজের কথা চিন্তা না করে প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। নিজের চিকিৎসা না করিয়ে মেয়েকে নিয়ে ছুটছেন ডাক্তারের কাছে।

Advertisement

প্রতিবেশী মিনু বেগম বলেন, মায়েরা এমনই হয়। এই বয়সে যেখানে তিনি সবার কাছ থেকে সেবা-যত্ন পাবেন, সেখানে তিনি তার প্রতিবন্ধী মেয়ের সেবা করে যাচ্ছেন। মায়ের সঙ্গে কারো তুলনা হয় না।

আমেনা বেগম বলেন, আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী। নিজে কিছুই করতে পারে না। তাই আমি সব করে দিই। এখন বয়স হয়ে গেছে। অনেক কিছুই করতে কষ্ট হয়। তবুও নিজেরই সব করতে হয়। আমি তো মা, মা কি কখনও পারে তার সন্তানকে কষ্টে রাখতে? সন্তানের শান্তিতেই মায়েদের আসল সুখ।

মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাজনীন আফরোজ বলেন, আমেনা বেগম একজন পরিশ্রমী মা। তার বয়স হলেও তিনি খুব সুন্দরভাবে তার প্রতিবন্ধী মেয়ের দেখাশুনা করছেন। পাশাপাশি তিনি হাঁস, মুরগি ও ছাগল পালন করে আয়ও করছেন।

এফএ/এএসএম

Advertisement