বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার প্রকান্তরে কোনো না কোনোভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছেন কি না তা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন, সংশয় দেখা দিতেই পারে। জনগণের মধ্যে সেই সংশয় তৈরি হয়েছে।
Advertisement
শনিবার (১০ মে) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আজ অন্তর্বর্তী সরকার অনেক কথা বলছে, গত ১৬ বছর রাত নাই, দিন নাই, একটা ভয়ঙ্কর আতংকের মধ্যদিয়ে ছুটে বেড়াতে হয়েছে। বিশ্বাস ছিল একটা দায়িত্বশীল সরকার আসবে, যারা জনগণের নিরাপত্তা দেবে। শেখ হাসিনার আমলে মানুষ যেমন রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশকে ভয় পেত, সেটি পাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংস্কার তো স্ট্যাটিক বিষয় নয়, সংস্কার তো ঐতিহাসিক বটগাছ নয়, যে যেটা দুলবে না, নড়বেও না। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। এখন যে সংস্কার চলছে, এটি হয়তো আবার ৫০ বছর পর সংস্কার করতে হবে। এটাই তো আইন। আইন আপডেট হবেই। আপডেট মানেই তো সংস্কার।
Advertisement
‘নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের জন্য কাজ করে, কারণ কাজ না করলে পরের বার নির্বাচনে প্রতিক্রিয়া হয়।’
আরও পড়ুনফ্যাসিস্টরা দেশ ছেড়ে পালায়, অথচ সরকার নাকি কিছুই জানে নারাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ কোনো সমাধান নয়: গয়েশ্বরনির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণই রাস্তায় নামবে: ফারুকএই বিএনপি নেতা বলেন, বিএনপি কিছু বলেলেই কথা শুরু হয়, বিএনপি তো ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছে, মার খেয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারে রক্ত ঝরানোর নীতির মুখোমুখি হতে নেতাকর্মীরা সংগ্রাম করেছে। তারপরও তো আমরা চাচ্ছি, সরকারকে তো সময় দেওয়া হচ্ছে, ঠিক আছে আপনারা প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন। কিন্তু আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) সে কাজটুকুও করেননি, করতে চাচ্ছেন না, অথবা আপনাদের মনোভাব কী সেটাও বলতে পারছেন না।
রিজভী বলেন, আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) নির্বাচনের একটা তারিখ ঘোষণার ক্ষেত্রেও গড়িমসি করছেন। এটাই হচ্ছে সন্দেহের কারণ, এটা নিয়ে জনগণ সন্দেহ করছে, মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। আমরা তার পরিস্থিতি দেখছি, হত্যা মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি চলে যাচ্ছে, সরকারের নাকি কেউ জানে না। অথচ শেখ হাসিনার আমলে গুম হওয়া সুমনের খোঁজে তার বাসায় গেছে পুলিশ। অথচ দুবারের রাষ্ট্রপতি খুনের আসামি উধাও হয়ে যায়, অদ্ভুত! এটা যে সরকার জানে না, তা নয়, সরকার প্রকান্তরে কোনো না কোনোভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছেন কি না, এটা নিয়ে তো জনগণের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিতেই পারে, সংশয় দেখা দিতেই পারে। জনগণের মধ্যে সেই সংশয় তৈরি হয়েছে।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার ভয়াবহ দানবীয় দুঃশাসনের মধ্যে যিনি মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলে গেছেন , সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশ ছেড়ে যাননি, মাটি ছেড়ে যাননি তার নামই ছিল এই মেডিকেল কলেজ (বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ)। প্রতিহিংসার যে কত লেলিহান ও লিপ্সা শেখ হাসিনার মধ্যে ছিল, তার প্রমাণ সে বেগম খালেদা জিয়ার নামটাও রাখতে দেয়নি।
Advertisement
তিনি বলেন, আপনারা যদি পটুয়াখালীতে যান, দেখবেন, একটা শেখ হাসিনা সেতু, পরেরটা শেখ রেহানা সেতু, পরেরটা শেখ জামাল সেতু, শেখ কামাল সেতু, শেখ রাসেল সেতু, গোটা দেশটা তার (শেখ হাসিনা) বাপের জমিদারি মনে করতো। অথচ দেশের বর্ষীয়ান ও বরেণ্য রাজনীতিবিদকে (বেগম খালেদা জিয়া) কী কষ্ট দিয়েছেন, তার নামটা মুছে ফেলেছেন।
রিজভী বলেন, বছরে ২০ লাখ মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতো। অবাক হই, গণমাধ্যমে দেখি, মফস্বলের হাসপাতালগুলোতে চেকআপ মেশিন নষ্ট। ঢালাওভাবে চিকিৎসকদের দোষারোপ করা যাবে না।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে এখনো বৈষম্য বিদ্যমান। স্বৈরাচারের দোসররা এখনো পোস্টিং বাণিজ্যসহ সবকিছু করে যাচ্ছে। আমাদের আদর্শের ডাক্তারদের ওপর নিপীড়ন করে যাচ্ছে।
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়ালের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহ-পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক কবির আল লাবু, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, কবি রেজা উদ্দিন স্টালিন প্রমুখ।
কেএইচ/ইএ/জেআইএম