দেশজুড়ে

নির্মাণকাজে ভাটা, কমেছে ইট বিক্রি

নির্মাণকাজে ভাটা, কমেছে ইট বিক্রি

খুলনায় ইটের বাজারে দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও কমে গেছে বিক্রির হার। বিল্ডিং নির্মাণ ও পরিকাঠামো নির্মাণ কাজ কমে যাওয়ায় ইটের চাহিদা কমে গেছে। আগের বছরের তুলনায় বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে। এজন্য দামও বাড়েনি ইটের বাজারে। ইট বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

খুলনার শিরোমনি, জিরো পয়েন্ট, রূপসা এবং কাস্টমঘাট এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরে ইটের দাম প্রতি হাজার সাড়ে নয় হাজার থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আগের বছরের তুলনায় বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে। ২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে ইট বিক্রির হার কমেছে খুলনার বাজারে। মূলত বিল্ডিং নির্মাণ ও পরিকাঠামো (সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, রেললাইন এবং ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন) নির্মাণ কাজের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ইটের চাহিদাও কম। এজন্য ইটের ব্যবসায় মন্দা চলছে। এজন্য চাহিদা না থাকায় দামও অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে।

আরও পড়ুন বেচাকেনায় ভাটা, পেশা বদলাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা  অনিশ্চয়তা-সংকটে ভালো নেই আবাসন ব্যবসা  দাম কমিয়েও ক্রেতা মিলছে না সিমেন্টের 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে খুলনার খুচরা বাজারে এক হাজার ইট সাড়ে নয় থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ট্রাকপ্রতি তিন হাজার ইট বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৩ হাজার টাকায়। অন্যদিকে ইট উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লা এখন প্রতিটন ১৯-২০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। যা করোনাকালীন সময়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা থেকে এক লাফে দাম বেড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা হয়েছিল।

ভাটা সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩-২৫ দুই অর্থ বছরে ইট উৎপাদন করে লাভের মুখ দেখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাধারণত ইট উৎপাদনে যাওয়ার সময় সেপ্টেম্বরের শেষের দিক হলেও এবার খুলনায় নভেম্বরের শুরুর দিকে ইট উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিন্তু নির্মাণ কাজ এবং সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প না থাকায় বাজারে ইটের চাহিদা কম। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী লোকসান ঠেকাতে ভাটা বন্ধ রেখেছেন। ইটের উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারে ইটের দাম বৃদ্ধি পায়নি। ফলে ইট উৎপাদনে লাভের মুখ দেখছেন না অনেক ভাটা মালিকরা।

Advertisement

নির্মাণ সামগ্রী বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুনিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান বলেন, খুলনার সব জায়গাতেই বর্তমানে বিল্ডিংয়ের কাজ কমে গেছে। ইট বিক্রি এখন অর্ধেকে নেমেছে। আগে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ট্রাক ইট বিক্রি হতো। যা এখন হচ্ছে ৪ থেকে ৫ ট্রাক। নির্মাণ প্রকল্প কম হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কাজ চলমান থাকলে চাহিদা থাকে। চাহিদা না থাকায় ইটের দাম বাড়েনি।

ডুমুরিয়ার সরদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সেলিম সরদার জানান, ইটের দাম এবার বাড়েনি। এক হাজার ইট দশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতবার এমন সময় ব্যাপক হারে ইট বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার নির্মাণ কাজ কমে যাওয়াতে ক্রেতাদের আনাগোনা কম। এজন্য ব্যবসা অনেকটা মন্দা যাচ্ছে।

বটিয়াঘাটার বাপ্পি এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল মান্নান বলেন, এক হাজার ইট ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। যা গতবারের থেকে চার থেকে পাঁচশ টাকা কম। গতবার এমন সময় প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ ট্রাক ইট বিক্রি হয়েছে। এবার ২-৩ ট্রাক বিক্রি করতেও কষ্ট হচ্ছে।

এসবি ইট ভাটার পরিচালক মুশফিক সালেহিন বলেন, ইটের বাজারের অবস্থা খারাপ। ইটের দাম না বাড়লেও উৎপাদন পর্যায়ে লাভের পরিমাণ কমে গেছে। শ্রমিক খরচ, কয়লা এবং পরিবহন খরচ বেড়েছে। কিন্তু ইটের দাম বৃদ্ধি পায়নি। গত দুই অর্থ বছরে ইটের বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। আগে একটি ইট বিক্রি করে ১ টাকা থেকে দেড় টাকা লাভ হতো। এখন সেই লাভ দাঁড়িয়েছে ৩০-৪০ পয়সাতে। ব্যয় বাড়লেও ইটের দাম বাড়েনি। বর্তমানে ব্যবসা টেকানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ইট উৎপাদন করে অবিক্রীত থাকলে লোকসানের মুখ দেখতে হয়। নির্মাণ কাজ এবং টেন্ডারের কাজ না থাকায় মূলত ইট বিক্রি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রিয়া ইটভাটার ম্যানেজার আহাদ আলী বলেন, উৎপাদন খরচ, শ্রমিক খরচ এবং পরিবহন খরচ বেড়েই চলেছে। কিন্তু লাভের অংশ বাড়ছে না। খুচরা বাজারে ইটের চাহিদা নেই বললেই চলে। প্রতিদিন গড়ে ২-৩টি ট্রাকও বিক্রি হচ্ছে না। এবার ভাটায় ইট অবিক্রীত থাকলে লোকসানের মুখ দেখতে হবে।

খুলনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম জমাদ্দার বলেন, বাজারে ইটের চাহিদা না থাকায় ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। নির্মাণকাজ এবং উন্নয়নমূলক কাজ না থাকায় এ ব্যবসায় মন্দা চলছে। এ বছর আমরা খুব শঙ্কিত। অনেক ভাটা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দাম নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু লোকসান ঠেকাতে ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত রেটের থেকেও কম দামে ইট বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে নির্মাণ কাজ এবং নতুন উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হলে ব্যবসা পূর্বের রূপে ফিরবে বলে তিনি আশা করেন।

এফএ/জিকেএস