বর্তমান আমদানিনীতি আদেশ-২০২১-২০২৪ অনুযায়ী (এইচ এস কোড-৮৭.০১ হতে ৮৭.০৪) সর্বোচ্চ ৫ বছরের পুরাতন কার, জিপ ও বাণিজ্যিক যান আমদানিযোগ্য। এই নীতি পরিবর্তন করে ১০ বছরের পুরাতন কার, জিপ ও বাণিজ্যিক যান আমদানিযোগ্য করার সযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোটার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা)।
Advertisement
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১০ বছরের পুরাতন গাড়ি আমদানিযোগ্য করা হলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম প্রায় অর্ধেকে চলে আসবে। এতে প্রতিটি গাড়ির জন্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আবার দাম কমার কারণে বিক্রি বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে, ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
বৃহস্পতিবার বারভিডা’র কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট আবদুল হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন বারভিডা’র সেক্রেটারি জেনারেল রিয়াজ রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ মো. সাইফুল ইসলাম (সম্রাট), জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ জগলুল হোসেন, প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি এস এম মনসুরুল করিম (লিংকন), কার্যনিবাহী সদস্য আখতার হোসেন মজুমদার, মো. হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, কে এম শফিউল্লাহ (রনি) প্রমুখ।
আবদুল হক বলেন, বর্তমান আমদানিনীতি আদেশ-২০২১-২০২৪ অনুযায়ী (এইচ এস কোড-৮৭.০১ হতে ৮৭.০৪) সর্বোচ্চ ৫ বছরের পুরনো কার, জিপ ও বাণিজ্যিক যান আমদানিযোগ্য। দেশের বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে মানসম্পন্ন, পরিবেশ-বান্ধব ও রিসেল ভ্যালুসম্পন্ন রিকন্ডিশন্ড গাড়ি সরবরাহের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। পরিবেশের দিকে খেয়াল রেখেই ইমিশন নিয়ন্ত্রণে এসব গাড়িতে ক্যাটালিটিক কনভার্টার নামে বিশেষ ডিভাইস সংযুক্ত থাকে। জাপানে নির্মিত এই গাড়িগুলো ২০-২৫ বছর পর্যন্ত নিরাপদে ব্যবহার করা যায় বলে সর্বশ্রেণির ক্রেতার কাছে এসব গাড়ির গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। রিকন্ডিশন্ড বলা হলেও বারভিডা আমদানি করা গাড়িগুলো প্রায় নতুন।
Advertisement
তিনি বলেন, জাপানের হোম মডেলের এসব গাড়ি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো- টেকসই ও পুনঃবিক্রয় মূল্য বিশ্বসেরা প্রযুক্তিসম্পন্ন হওয়ায় জাপানে উৎপাদিত এসব গাড়ি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এবং ২০-২৫ বছর ব্যবহার করার পরও পুনঃবিক্রির সময় এসব গাড়ির ভালো মূল্য পাওয়া যায়। খুচরা যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা ও সুলভ মূল্য। বাংলাদেশে জাপানি টয়োটা, নিশান, হোন্ডা, মিতসুবিশি ইত্যাদি ব্র্যান্ডের গাড়ির যন্ত্রাংশ সহজলভ্য এবং সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়, যা গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ সহজ করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে আমদানি করা গাড়ির ৭৫ শতাংশই জাপান থেকে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। বিশ্বব্যাপী মানসম্পন্ন জাপানি গাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডে গাড়ি আমদানির কোনো বয়সসীমা নেই। নিউজিল্যান্ডে ৮ বছর, কানাডায় ১৫ বছর এবং হংকংয়ে ৭ বছর গাড়ি আমদানির বয়সসীমা নির্ধারণ করা আছে। আর বাংলাদেশে গাড়ি আমদানির বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ বছর। আমরা এটিকে ১০ বছরে উন্নীত করার দাবি জানাচ্ছি।
বারভিডা প্রেসিডেন্ট বলেন, বর্তমান আমদানি নীতিমালা সংশোধন করে গাড়ির আমদানিযোগ্য বয়স ১০ বছর করা হলে গাড়ির বয়সভেদে কমবেশি ৫০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশের বাজারে গাড়ির মূল্য লক্ষ্যণীয় হারে কমে আসবে। আমদানিকারকরা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মূল্যের গাড়ি আমদানি করতে পারবেন। দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যাপক অংশ এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারাও পরিবারের প্রয়োজন ও নিরাপত্তার কথা ভেবে গাড়ি কিনতে আগ্রহী হবেন। সরকারের রাজস্ব ও শুল্ক কর বাবদ আয় বৃদ্ধি পাবে।
আবদুল হক বলেন, রিকন্ডিশন্ড মোটরযান আমদানির ক্ষেত্রে আমরা ন্যূনতম ১২৯ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৮২৬ শতাংশ শুল্ক প্রদান করছি। জাপান সরকার প্রকাশিত ইয়েলো বুকে প্রদর্শিত নতুন মূল্যের সঙ্গে জাপানের অভ্যন্তরীণ বাজারের খুচরা বিক্রেতার ডিলার কমিশন ও স্থানীয় কর বাবদ সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ যুক্ত করা আছে। তাই জাপান থেকে আমরা সর্বোচ্চ ৫ বছরের পুরনো যেসব গাড়ি আমদানি করে থাকি সেসবের ক্ষেত্রে নতুন মূল্য হতে ২০ শতাংশ বিয়োজন করে রপ্তানিযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু বাস্তবে ইয়োলো বুকে উল্লিখিত নতুন মূল্য থেকে কোন ডিলার কমিশন বিয়োজন ছাড়াই বছরভিত্তিক অবচয় প্রদান করা হচ্ছে।
Advertisement
আবার যে ব্যবসায়ীরা দেশে নতুন গাড়ি আমদানি করছেন তাদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়ে শুল্ক মূল্য নির্ধারণ করে শুল্ক-কর ধার্য করা হচ্ছে। এটি একটি অনায্য ও বৈষম্যমূলক পদ্ধতি এবং কাস্টম আইন ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। শুল্কায়ন মূল্যে এই চরম বৈষম্যের ফলে নতুন গাড়ির চেয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি পড়ে যাচ্ছে। ফলে ক্রেতা কমে যাচ্ছে, আমদানি হ্রাস পাচ্ছে এবং এ খাতের ব্যবসায়ীরা মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ছেন- বলেন বারভিডা প্রেসিডেন্ট।
এমএএস/এমএইচআর/জিকেএস