দীর্ঘ আট মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বেরোবি প্রশাসন। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থী ৩৫ জন, শিক্ষক ২ জন, কর্মকর্তা কর্মচারী ১৩ জন, পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবল ৮ জন, স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ১৩ জন রয়েছেন। এছাড়াও ৮০-১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
Advertisement
বুধবার (৭ মে) তাজহাট থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলাটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশীদ। এরপর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তারুলকে গ্রেফতার করে তাজহাট থানা পুলিশ।
আসামিরা হলেন- বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর, সহসভাপতি বিধান বর্মণ, গ্লোরিয়াস ফজলে রাব্বী, তানভির আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক শাহিদ হাসান সিদ, সহসভাপতি মমিনুল হক, আখতার হোসেন, শাহীন ইসলাম প্রমুখ।
গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ, সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান তুফান, কর্মচারী আমির হোসেন, সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশ, উপরেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম, প্রক্টর অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, মাস্টার রোল কর্মচারী নুরনবী, নিরাপত্তা শাখার কর্মচারী নুর আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার (ডেসপাস) মোক্তারুল ইসলাম, সেমিনার সহকারী আশিকুন্নাহার টুকটুকি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবা আক্তার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের মাহবুবার রহমান বাবু, প্রক্টর অফিসের মো. আপেল, সাবেক ভিসির পিএস আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
Advertisement
তাজহাট থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিকরুল মাহবুব শোভন, যুবলীগ কর্মী শামিম হাসান, শাহারিয়ার নয়ন, আহসান হাবিব লালন, আল আমিন, ছাত্রলীগ কর্মী ইশাক রিজন, সায়ির বিন আশরাফ আনন্দ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আতিকুল বারী জামিন, জাকির মুসা, রংপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিক রনি, আওয়ামী লীগ কর্মী মো. নয়ন, তাজহাট থানার যুবলীগ সেক্রেটারি শিপন।
এছাড়া তৎকালীন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. আল ইমরান হোসেন, আরিফুজ্জামান, সাবেক ওসি রবিউল ইসলাম, বেরোবি ফাঁড়ি ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায়, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, আমির আলী, উপপুলিশ কমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ উপকমিশনার শাহানুর আলম পাটওয়ারী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ১১, ১৫ ও ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। ১১ জুলাই শহীদ আবু সাঈদকে পোমেল বড়ুয়া চড়-থাপ্পড় মারেন এবং মাসুদুল হাসান হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরেন। এছাড়া ১৬ জুলাই পুলিশ, বহিরাগতসহ অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১০০ জন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, লাঠিসোঁটা, লোহার রড, হাতবোমা, আগ্নেয়াস্ত্র-পিস্তলসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পর্যায়ক্রমে হামলার কথা উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, জুলাই আন্দোলনে হামলাকারীর সংখ্যা শুধু এই ৭১ জন নয়। তাই অজ্ঞাতনামায় হামলাকারীর সংখ্যা ৮০ থেকে ১০০ জনকে রাখা হয়েছে। তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের আটক করা হবে।
Advertisement
মামলার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আশিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবে হামলাকারীদের ক্ষেত্রে এক বিন্দু ছাড় নেই। আমার কাছে সাক্ষী হিসেবে প্রশাসন নাম চেয়েছে। আমি সাক্ষী হিসেবে আমার নিজের নাম জমা দিয়েছি। মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের তালিকা কিসের ভিত্তিতে করেছে এ ব্যাপারে আমার ধারণা নেই। প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশে আসামিদের তালিকা করেছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে অবগত হয়েছি। আমাদের চাওয়া একটাই, একজন অপরাধীও যেন ছাড় না পায়। কোনো অপরাধী বাদ গেলে যেন তদন্ত সাপেক্ষে তার নাম চলে আসে এটাই আমাদের চাওয়া।
মামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি।
তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম সরদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। এরপর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তারুলকে গ্রেফতার করি।
ফারহান সাদিক সাজু/এফএ/এএসএম