দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পিচঢালা পথে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ যাত্রীসহ ভ্রমণপিপাসুরা। সোনালু-জারুল ফুলে বর্ণিল রূপ নিয়েছে ব্যস্ততম জাতীয় এই মহাসড়ক।
Advertisement
বৈশাখের তপ্ত রোদে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া ও জারুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে যেন একটি ক্যানভাস। এই দৃশ্য ফ্রেমবন্দি করতে এক মুহূর্তের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ান প্রকৃতিপ্রেমীরা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত মহাসড়কের শত কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন মনোরম দৃশ্য।
সরেজমিনে মহাসড়কের দাউদকান্দির রায়পুর, জিংলাতলী, গৌরিপুর, চান্দিনার কুটুম্বপুর, মাধাইয়া, নাওতলা, বুড়িচং উপজেলার কোরপাই এলাকায় অসংখ্য সোনালু ও জারুল ফুলের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া আদর্শ সদরের জাগুরজুলি, সদর দক্ষিণের সুয়াগাজী ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অধিকাংশ স্থানে ফুটেছে অসংখ্য সোনালু ও কৃষ্ণচূড়া ফুল। হলুদ, লাল, গোলাপি ও বেগুনি রঙের এসব ফুলে আকৃষ্ট হচ্ছেন সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ সড়কের পাশে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। কেউ আবার ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তৈরি করছেন ভিডিও কন্টেন্ট।
আরও পড়ুন-
Advertisement
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র মতে, কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ফেনী পর্যন্ত এ মহাসড়কে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হৈমন্তী, কুর্চি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশ, কবরী, ক্যাসিয়া ও জারুল প্রভৃতি। এরকম প্রায় ৫৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এগুলোর উচ্চতা দুই থেকে পাঁচ মিটার পর্যন্ত।
এছাড়া সড়কের ঢালে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, চালতা, নিম, হরিতকীসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৪২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছ দিনে মহাসড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি আর রাতে বিপরীতমুখী গাড়ির হেডলাইটের আলো নিয়ন্ত্রণ করে দুর্ঘটনা রোধেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
শাহ আলম মজুমদার নামে এক যাত্রী বলেন, আমার বাড়ি চৌদ্দগ্রাম এলাকায়। ব্যবসার সুবাদে প্রায় এই সড়কে যাতায়াত করতে হয়। সড়ক বিভাজকের দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রামের পদুয়া পর্যন্ত নানা প্রজাতির ফুলে আমি মুগ্ধ। যার কারণে গাড়ি থামিয়ে দুই একটি ছবি তুলে নিচ্ছি। কারণ ফুল প্রকৃতিতে ও মানুষের মনে সুরভী ছড়ায়, আনন্দের দোলা দেয়। ফুল ভালোবাসেন না, এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই আছে। দীর্ঘ যাত্রা পথে এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখলে ক্লান্তি দূর হয়।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী সামসুল আরেফিন বলেন, সোনালুর ইংরেজি নাম ‘গোল্ডেন শাওয়ার’ ও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্যাসিয়া ফিস্টুলা’। মধ্যম আকৃতির সোনালু এ দেশের স্থায়ী বৃক্ষ। সোনালুর ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। এটির পুংকেশর দশটি এবং দীর্ঘ মঞ্জুরি দণ্ড আছে। বসন্তে এটি পত্রশূন্য থাকে। গ্রীষ্মকালের বৈশাখে নতুন পাতা গজায়। প্রকৃতিতে শোভাবর্ধনে সোনালুর জুড়ি নেই।
Advertisement
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রাতের বেলায় বিপরীত দিকের গাড়ির হেডলাইটের আলো যেন চালকের চোখে না পড়ে এজন্য ডিভাইডারে বিভিন্ন ধরনের গাছের পাশাপাশি এসব ফুলের গাছ রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব ফুলের সৌন্দর্য মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের মুগ্ধ করছে। তবে কয়েকটি স্থানে কিছু গাছ মরে গেছে। বর্ষা মৌসুমে নতুন করে সেসব স্থানে বৃক্ষ রোপণ করা হবে। এছাড়া সওজের নিযুক্ত শ্রমিকরা নিয়মিত বিভাজকের গাছগুলোর পরিচর্যা করছেন।
এফএ/এমএস