ইফরাদ হজ: হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) শুধুমাত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদন করাকে ইফরাদ হজ বলা হয়।
Advertisement
কিরান হজ: হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) হজ ও ওমরা পালনের নিয়তে দীর্ঘ দিনের জন্য ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ সম্পাদন করাকে কিরান হজ বলে।
তামাত্তু হজ: হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) ওমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ পালন করে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাওয়া অতঃপর হজের আগে হজের নিয়তে ইহরাম বেধে হজ সম্পাদন করাকে তামাত্তু হজ বলে।
হজের প্রকারগুলোর মধ্যে কিরান হজ সর্বোত্তম। কিরান হজে দীর্ঘ দিন ইহরাম অবস্থায় থাকতে হওয়ার কারণে এটা বেশি কষ্টসাধ্য। আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ ছিল কিরান হজ। আনাস (রা.) বলেন, আমি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একত্রে হজ ও ওমরাহর তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। তিনি বলছিলেন, “লাব্বাইকা ওমরাতান ওয়া হাজ্জান”। (সহিহ মুসলিম: ২৮৮৫) অর্থাৎ তিনি একইসাথে ওমরাহ ও হজের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন এবং ওমরাহ ও হজ পালন করেছিলেন।
Advertisement
তবে অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ পালন করে থাকে। তামাত্তু হজ পালন সুবিধাজনক ও অপেক্ষাকৃত কম কষ্টসাধ্য। তামাত্তু হজে প্রথমে ওমরাহ পালন করে হালাল হওয়া যায় এবং হজের আগ মুহূর্তে হজের জন্য নতুন করে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পন্ন করতে হয়।
ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন, কিরান হজে ইহরাম দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে ইহরামের নিষেধাজ্ঞাগুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে না পারার আশঙ্কা থাকলে তামাত্তু হজই উত্তম। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/ ৫২৯)
হজ ফরজ হলে দ্রুত হজ পালন করুনহজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। তাই সামর্থ্য থাকলে অযথা অবহেলা বা দেরি না করে দ্রুত হজ করে ফেলা উচিত। আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। (সুরা আলে ইমরান: ৯৬, ৯৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরার করতে থাক। কারণ এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। মাবরুর হজের (সব রকম গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র) সাওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। (সুনানে নাসাঈ: ২৬৩১, সুনানে তিরমিজি: ৮১০)
Advertisement
হজের মৌসুমে হজে যাওয়া-আসার খরচসহ সফরে থাকাকালীন দিনগুলোতে তার ও পরিবারের লোকদের স্বাভাবিক খরচের ব্যবস্থা থাকলে এবং দৈহিকভাবে হজ করার সক্ষমতা থাকলে হজের সামর্থ্য প্রমাণিত হয় ও হজ ফরজ হয়।
কারো যদি কাবায় পৌঁছার সামর্থ্য থাকে কিন্তু তার হজের সফরের সময় পরিবার-পরিজনের দেখাশোনা ও ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা না থাকে, তার ওপর হজ ফরজ হবে না। একইভাবে কারো যদি হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গের কোনোটি বিকল হয় বা কেউ যদি একা চলাফেরা কতে সক্ষম না হয়, তার ওপরও হজ ফরজ হবে না।
নারীদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য হজের সফরে তার সাথে যাওয়ার মতো মাহরাম ব্যক্তি থাকাও জরুরি। মাহরাম না থাকলে সম্পদশালী নারীর জন্য নিজে গিয়ে হজ করার আবশ্যকতা থাকে না। কোনো নারীর কাছে যদি শুধু নিজের হজে যাওয়ার মতো সম্পদ থাকে, কোনো মাহরামকে নিয়ে যাওয়ার মতো সম্পদ বা সুযোগ না থাকে, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ নয়।
ওএফএফ/এমএস