কর্মক্ষেত্রে সফল হতে কে না চায়? যে কোনো পেশায়ই সাফল্য মানে শুধু প্রমোশন বা বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং আত্মতৃপ্তি, সামাজিক মর্যাদা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতাও এর অন্তর্ভুক্ত। তবে এ সাফল্য রাতারাতি আসে না। কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি ও কৌশল রপ্ত করলেই আপনি নিজের জায়গা করে নিতে পারবেন একদম সেরাদের কাতারে।
Advertisement
চলুন দেখে নিই, কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য কী কী গুণ নিজের মধ্যে তৈরি করা দরকার এবং তা অর্জনের উপায় কী?
>> কাজের প্রতি গভীর মনোযোগআপনি যে কাজেই নিযুক্ত থাকুন না কেন, সেই কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিন। প্রতিটি ছোট-বড় বিষয় খেয়াল করুন। কাজটি কীভাবে হচ্ছে, ফলাফল কী, আপনার দায়িত্বটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? এসব জানতে চেষ্টা করুন। মনোযোগী হলে আপনি শুধু কাজটা ভালোভাবে করতে পারবেন না, বরং নতুন কিছু শেখার সুযোগও তৈরি হবে।
প্রয়োজনে সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতনদের কাছ থেকে সাহায্য নিন। প্রশ্ন করুন, জানুন এবং প্রতিদিন শেখার মানসিকতা রাখুন। কাজ বোঝার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠান ও তার সংস্কৃতিকেও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। এতে কাজের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।
Advertisement
>> পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করাগুছিয়ে কাজ করার অভ্যাস একজন কর্মীর বড় সম্পদ। প্রতিদিনের কাজের জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন। অফিসে আসার আগেই দিনের কাজগুলো ঠিক করে রাখলে সময় বাঁচবে এবং আপনি দ্রুত কাজে মন দিতে পারবেন।
নিজের সময় ব্যবস্থাপনা ভালো হলে আপনি সহজেই বাড়তি চাপ সামলাতে পারবেন। পাশাপাশি নতুন কাজের সুযোগ পেলেও তা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এভাবে নিয়মিত পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করলে কর্মদক্ষতাও বাড়বে।
আরও পড়ুন: লাইক-কমেন্টের ফাঁদে মৃত্যু: সোশ্যাল মিডিয়া যখন জীবনের হুমকি রাস্তায় আঁকা রহস্য: চিহ্নগুলোর ভাষা বুঝলে বাঁচবে জীবন নোটিফিকেশনের ভিড়ে নিঃশব্দে ডুবে যায় মনের শান্তি>> ধারাবাহিক শেখার অভ্যাস গড়ে তুলুনকোনো পেশায়ই ‘সব জেনে গেছি’ ভাবা যায় না। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এই জগতে টিকে থাকতে হলে নিজেকে হালনাগাদ রাখা জরুরি। প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করুন। বই পড়ুন, অনলাইন কোর্স করুন, অভিজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করুন।
আপনার পেশাগত দক্ষতা যত বাড়বে, ততই আপনি কর্মক্ষেত্রে আলাদা হয়ে উঠবেন। মনে রাখবেন শেখার চর্চা আপনাকে শুধু ভালো কর্মীই নয়, একজন পরিপূর্ণ পেশাজীবী করে তুলবে।
Advertisement
>> শুধু অর্থ নয়, ভালোবাসা দিন কাজকেকাজকে শুধুই আয় বা চাকরির মাধ্যম হিসেবে দেখলে আপনি কখনোই তার আসল আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন না। কাজের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা থাকলে আপনি নিজের সর্বোচ্চটা দিতে পারবেন।
প্রতিটি কাজ একটি দায়িত্ব ও সুযোগ হিসেবে দেখুন। কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করুন। তাতেই কর্মক্ষেত্রে আপনার গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রভাব বাড়বে।
>> সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুনএকটি সফল পেশাজীবনের জন্য আন্তরিক সহকর্মী সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অফিসের সবাইকেই সম্মান করুন। হাসিখুশি থাকুন, সহকর্মীদের সময়ের মূল্য দিন, দলগত কাজে সক্রিয় থাকুন এবং কাউকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসুন।
টিমওয়ার্কে আপনি যেমন অন্যদের কাছ থেকে শিখবেন, তেমনি নিজের জ্ঞানও ভাগাভাগি করুন। অফিস রাজনীতি এড়িয়ে চলুন এবং পজেটিভ মনোভাব ধরে রাখুন। এতে কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠবে আনন্দময়, আর আপনি হবেন সবার প্রিয়।
>> নির্ধারিত সীমার চেয়েও একটু বেশি সময় দিনশুধু চাকরির শর্ত অনুযায়ী কাজ করে থেমে থাকবেন না। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অতিরিক্ত চেষ্টা করুন। অফিসের সময় শেষ হলেও কখনো কখনো প্রয়োজনে একটু বেশি সময় দিন। এতে কাজের মান যেমন বাড়বে, তেমনি আপনার দক্ষতা ও কর্মস্পৃহাও বাড়বে। ব্যবস্থাপনাও এক সময় আপনার এই উদ্যোগকে প্রশংসা করবে। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করলে তার ফল অবশ্যই আপনি পাবেন।
সর্বোপরি কর্মক্ষেত্রে সফলতা পেতে চাইলে প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। মনোযোগ, পরিকল্পনা, শেখার ইচ্ছা, আন্তরিকতা, সহকর্মীদের প্রতি সদ্ভাব এবং সেরাটা দেওয়ার মানসিকতা; এই গুণগুলো যদি আপনি চর্চা করেন, তাহলে কর্মজীবনে সফল হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
জেএস/এএসএম