দু-চোখে আলো নেই। তবু থেমে থাকেননি তূর্য। স্বপ্ন দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বড় মানুষ হওয়ার। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও মনের আলো এগিয়ে চলেছেন তিনি। স্বপ্ন পূরণ করতে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে।
Advertisement
পুরো নাম মো. ইনতেসার ইসলাম তূর্য। বাড়ি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর গ্রামে।
শুক্রবার (২ মে) গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের 'বি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ নেন তূর্য। সবসময় ছায়ার মতো পাশে থাকা স্কুল শিক্ষিকা মা মোছা. ইসরাত জাহানের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। পরীক্ষাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল তার খোঁজখবর নেন।
ইসরাত জাহান জানান, চোখে ছানি নিয়ে জন্ম হয় তূর্যের। পরবর্তীতে গ্লুকোমা, মেনিনজাইটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারান। অন্য চোখে ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি থাকলেও তা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পৃথিবী দেখা সম্ভব নয়।তবে এসব প্রতিবন্ধকতা তূর্যকে দমাতে পারেনি। তিনি আটঘরিয়ার শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে খিদিরপুর ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪.৫৮ জিপিএ অর্জন করেন।
Advertisement
ভর্তি পরীক্ষা শেষে তূর্য বলেন, খুব ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়ার। কিন্তু সেখানে চান্স হয়নি। এখন আশা করছি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবো। যদি পাই, তাহলে ভর্তি হব।
তুর্যের মা ইসরাত জাহান বলেন, ঢাবিতে পরীক্ষা দিতে গিয়ে যখন পরীক্ষা হলে ওকে একা রেখে এলাম, আমি কান্না ধরে রাখতে পারিনি। প্রায় এক ঘণ্টা কেঁদেছি। ওর জন্ম থেকেই অনেক অসুস্থতা ছিল। চোখের সমস্যা, নিউরোলজিক্যাল জটিলতা ছিল। ওর আচরণ ছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মতো। আমি অনেক যত্ন করে ওকে বড় করেছি। ধীরে ধীরে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে শিখিয়েছি। আমি নিজে ওকে পড়াতাম, ও শুনে শুনে মুখস্থ করত।
তিনি আরও বলেন, সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। যেন আমার কষ্ট-শ্রম বৃথা না যায়। আমি চাই, তূর্যকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রেরণা পাক। কেউ যেন নিজের সীমাবদ্ধতার কারণে পিছিয়ে না পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক ড. আব্দুর রহিম জানান, জিএসটি থেকে নির্দেশনা আছে যদি কোনো শিক্ষার্থী চোখে না দেখে তার জন্য শ্রুতিলেখকের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই অনুযায়ী এসএসসির নিচের শ্রেণির একজনকে শ্রুতিলেখক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মেডিকেল সেন্টারে তূর্যের জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Advertisement
এমএন/এমএস