লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে শিয়ালখোওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসানো হচ্ছে হাটবাজার। এতে বিঘ্ন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার পরিবেশ। খেলাধুলার চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যাতায়াতে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তি।
Advertisement
সপ্তাহের প্রতি শনি ও বুধবার পশুর হাট বসে। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। আর বাকি পাঁচদিন প্রতিষ্ঠানটির মাঠে দৈনিক বাজার বসে। ১৬ এপ্রিল থেকে এভাবেই বিদ্যালয় মাঠ দখল করে হাট বসানো হচ্ছে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, যদি এই মাঠ হাটবাজারের দখলে চলে যায়, তাহলে কোমলমতি শিশুদের আর কোনো স্বপ্ন থাকবে না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আরিফ বলেন, আমার ফুটবল খেলতে চাই মাঠে। কিন্তু এখন মাঠে খেলতে পারি না। আমরা পড়তে এসেছি, এখানে পশুর হাট দেখতে চাই না।
Advertisement
উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র শরিফুল ইসলাম বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা না করতে পারলে আমরাও পিছিয়ে যাবো। খেলাধুলা না করতে পারলে আমরা বিভিন্ন দিকে চলে যেতে পারি। কারণ আমাদের এখানে মাদকের আড্ডা বেশি হয়।
শিয়ালখোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাশেম আলী বলেন, শিক্ষার পরিবেশ বাঁচাতে হলে মাঠ হাটমুক্ত করতে হবে। কিন্তু আমরা বারবার বলেও সাড়া পাচ্ছি না।
শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয়রা বলেন, উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের শিয়ালখোওয়া এলাকায় অবস্থিত শিয়ালখোওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিয়ালখোওয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। একই ক্যাম্পাসে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১৫ শিক্ষার্থী এবং উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে ৭৫০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একমাত্র খেলার মাঠটির আয়তন প্রায় তিন একর। এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে তিনটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও একটি মাদরাসা। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাঠটিতে খেলাধুলা করতো।
Advertisement
এই মাঠের পাশেই ৫৮ শতক জমির ওপর সরকারিভাবে শেড ঘর আর কিছু দোকানপাট রয়েছে। সপ্তাহে শনি ও বুধবার বসা হাটটি দীর্ঘদিন ধরেই নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে দখল করে আছে স্কুল মাঠ।
মাঠ জুড়ে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, সাইকেল, তামাকসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার বসায় সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতেও খেলার উপযোগী থাকে না। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।
শিয়ালখোওয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মনিন্দ্র নাথ রায় বলেন, অতিরিক্ত লোকসমাগমে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা। মাঠে পশু রাখা হচ্ছে, বাজে শব্দ আর দুর্গন্ধে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।
এলাকার বাসিন্দা সালাম মিয়া বলেন, হাটবাজারের কারণে শিশুদের মনোযোগ তো থাকেই না, উল্টো অপরাধ প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমাদের দাবি স্কুল মাঠে যেন ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে শিয়ালখোওয়া হাট ইজারাদার আসাদুল হক হিরুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বদরুল হাসান বলেন, এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, হাট ইজারা দেওয়া হলেও স্কুলমাঠ ইজারা দেওয়া হয়নি। আমি একটা চিঠি দিয়েছে মাঠে হাট না বসানোর জন্য। বিকল্প জায়গা খোঁজার চেষ্টা চলছে। দ্রুত স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদারদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেডএইচ/এএসএম