ক্যাম্পাস

টিএসসির টয়লেটের দুটির কমোড নষ্ট, অন্যগুলো ব্যবহারের অযোগ্য

টিএসসির টয়লেটের দুটির কমোড নষ্ট, অন্যগুলো ব্যবহারের অযোগ্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র টিএসসি। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ই টিএসসি মুখর থাকে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। স্বাভাবিকভাবেই পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন থাকার কথা প্রতিষ্ঠানটি। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিশেষ করে টয়লেটগুলোর অবস্থা এমন যে, ব্যবহার করা মোটামুটি অসম্ভব। কোনোটি একেবারেই নষ্ট। আবার কোনোটি আংশিক নষ্ট। কোনোটি সচল থাকলেও অপরিচ্ছন্নতার কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী। আবার কোনোটি ব্যবহার করা হচ্ছে স্টোর রুম হিসেবে!

Advertisement

শিক্ষার্থীদের কাছে ওয়াশরুমের অবস্থা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা হোসাইন ফারিহা জাগো নিউজকে বলেন, টিএসসির ওয়াশরুম দুই বছরে মাত্র একবার ব্যবহার করতে পেরেছি। সেটিও অতি জরুরি হওয়ার কারণে।

টয়লেটগুলো সব সময়ই ব্যবহারের অযোগ্য থাকে দাবি করে সানজিদা বলেন, এখানে টয়লেটগুলো সব সময়ই ব্যবহারের অযোগ্য থাকে। এ কারণে যাই না। যে কয়বার গিয়েছি ব্যবহার না করেই বের হয়ে গেছি। স্যানিটারি প্যাডের জন্য ভেন্ডিং মেশিন থাকলেও প্যাড থাকে না সেখানে। নিরুপায় হয়ে এই নোংরা টয়লেট ব্যবহার করতে হয়।

কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিভাগের শিক্ষার্থী স্বনামের সঙ্গে। স্বনাম বলেন, বাংলাদেশে নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ ওয়াশরুমের অভাব একটি বড় সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে টিএসসির মেয়েদের শৌচাগারগুলো অস্বাস্থ্যকর, অপরিচ্ছন্ন, জীবাণু ও দুর্গন্ধে ভরা।

Advertisement

প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বনাম বলেন, সেখানে পর্যাপ্ত পানি, টিস্যু বা ওয়াশের ব্যবস্থা নেই। দ্রুত এই শোচনীয় অবস্থা দূর করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ার বিপরীত পাশে ২ ভাগে রয়েছে ওয়াশরুম (প্রক্ষালন কক্ষ)। একদিকে পুরুষদের এবং অন্য দিকে নারীদের জন্য। দুই ভাগেরই অবস্থা ভয়াবহ রকমের নোংরা।

আরও পড়ুন শিগগির ডাকসু নির্বাচন চান ঢাবির ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী  ‘সমান সমান কাজ করি, বয়সে ছোট বলে বেতন কম দেয়’  ঢাবির ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের নতুন আচরণবিধি চূড়ান্ত 

পুরুষ প্রক্ষালন কক্ষে টয়লেট রয়েছে মোট ৬টি। এর মধ্যে ৪টি হাই-কমোড ও ২টি লো-কমোড। এসবের মধ্যে দুটির দরজা বন্ধ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দুটি টয়লেটের কমোড নষ্ট। বাকি টয়লেটগুলোর একটি ব্যবহার অনুপযোগী। নারী প্রক্ষালণ কক্ষের অবস্থাও প্রায় একই।

Advertisement

টয়লেট বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে বর্তমানে সহকারী কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালনকারী পলাশ নামে একজন বলেন, একটি টয়লেটকে আমরা স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করি। আর অন্যটি কোনো কারণে হয়তো বন্ধ ছিল। সাধারণত ৫টি টয়লেট খোলা থাকে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, টিএসসির ওয়াশরুমের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্লিনারদের দিনে ৩ বার পরিষ্কার করার কথা। তবে বাস্তবে তা হয় না। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে মূলত ওয়াশরুম বেশি অপরিষ্কার থাকে।

এ নিয়ে সহকারী কেয়ারটেকারের দায়িত্বে থাকা পলাশ জানান, পুরো টিএসসিতে মোট ৭ জন ক্লিনার আছেন। প্রতিজনের ডিউটি ৮ ঘণ্টার। কিন্তু এত বড় জায়গা সামলাতে গিয়ে ওয়াশরুমে একজনের বেশি ক্লিনার বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার একজন ক্লিনারের পক্ষে এত বহুল ব্যবহৃত ওয়াশরুম পরিষ্কার রাখা সম্ভব হয় না।

তিনি আরও বলেন, ওয়াশরুম দিনে তিনবার পরিষ্কার করা হলেও বাইরে থেকে আসা দোকানদারদের ব্যবহারের কারণে তা দ্রুত নোংরা হয়ে যায়। অনেকেই হাই-কমোড ব্যবহার জানে না। ফলে সমস্যাটা আরও বাড়ে।

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালক ফারজানা বাসারের দাবি, জনবল সংকটের কারণে টিএসসিতে যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একই সঙ্গে কেয়ারটেকাররা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, এখানকার অনেক ক্লিনার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অতিরিক্ত কাজ করে। আবার ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগ পাওয়া স্টাফরা কাজে অনীহা দেখায়।

দায়িত্বে অবহেলা করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেয়ারটেকার নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় বাধ্য হয়ে পলাশ নামের একজন দারোয়ানকে সহকারী কেয়ারটেকারের দায়িত্ব দিতে হয়েছে।

'কেয়ারটেকাররা ইচ্ছেমতো অফিসে আসে, যায়। কোনো শৃঙ্খলা নেই। জনবল সংকটও প্রকট যা সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

বাইরে কাজ করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, কেয়ারটেকারের নজরুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, আমি বাইরে কোনো কাজ করি না। বিমল নামে একজন ক্লিনারকে দিনে তিনবার ওয়াশরুম পরিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া আছে। তবে সেও অনেক সময় ফাঁকি দেয়।

এফএআর/এমএইচআর/জিকেএস