দেশজুড়ে

খুলনা নগরবাসীর ‘বিষফোড়া’ জলাবদ্ধতা

খুলনা নগরবাসীর ‘বিষফোড়া’ জলাবদ্ধতা

খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) মেয়র পদে ব্যক্তির পরিবর্তন হয়, তবে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মেলে না নগরবাসীর। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে জমে যায় হাঁটুপানি। ভোগান্তির শেষ থাকে না। এ অবস্থার জন্য সিটি করপোরেশনের দূরদর্শিতার অভাব, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, খাল-বিল দখল আর সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করছেন নগরবাসী।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর টুটপাড়া, রয়েল মোড়, মিস্ত্রিপাড়া, খালিশপুর, নিউ মার্কেট এলাকা, বাস্তুহারা এলাকা, শান্তিধাম মোড়, দিলখোলা রোড, পূর্ব বানিয়া খামার, বসুপাড়া, ফুলবাড়িগেট, আলমনগর, মুজগুন্নি আবাসিক এলাকা, করপাড়া, দৌলতপুর বীনাপানি এলাকা, কুয়েট রোড, রূপসা ব্রিজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকা সামান্য বর্ষায় তলিয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাণিজ্যিক এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের একাধিক কাজ বাস্তবায়ন হলেও দূর হয়নি সমস্যা।

কেসিসি সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। যাতায়াতের জন্য সড়ক রয়েছে প্রায় এক হাজার ২১৫টি। পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল রয়েছে ১৩টি। ড্রেন রয়েছে প্রায় ৫৪২ কিলোমিটার। ড্রেন ও খাল সংরক্ষণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ ও ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়নে কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। সব মিলিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছরে এই দুই প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ৪৮৩ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। যার মধ্যে বেশিরভাগ কাজ এখনো চলমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেসিসির একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘জলাবদ্ধতার মূল কারণ জনবান্ধবহীন মেয়র। আমরা তো সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক থাকাকালীন কোনো পরিকল্পনা নিয়ে মুখই খুলতে পারতাম না। কিছু বলতে গেলেই বলতো, এ ব্যাডা, তুমি বেশি বুঝো?

Advertisement

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পরিকল্পনা না করে প্রকল্প দাঁড় করিয়ে টেন্ডার বাণিজ্য করা হয়েছে। যে কারণে জলাবদ্ধতা দূর হয়নি। মেয়রের চেয়ারে বসে খালেক সাহেব করেছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। ৮০ শতাংশ কাজ বিভিন্ন কাউন্সিলর এবং খালেক সাহেব নিজেই করেছেন। অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে ইনডিরেক্টলি লাঞ্ছিত করার হুমকি পেয়েছেন অনেকে। ঠিকাদারি কাজ কৌশলে নিজেই করতেন মেয়র খালেক। প্রকল্প আর কাজের নামে শুধু আওয়ামী লীগ নেতাদের পকেট ভর্তি হয়েছে। আসলে নেতাদের উন্নয়ন হলেও নগরবাসীর কোনো উন্নয়ন হয়নি।’

আরও পড়ুন সব সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী চীন ইশরাক হোসেন কি ৫ বছরের জন্য মেয়র নির্বাচিত হলেন? সিটি করপোরেশন হচ্ছে বগুড়া, গণবিজ্ঞপ্তি জারি

টুটপাড়ার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৃষ্টি কিংবা জোয়ার-ভাটায় টুটপাড়া পানিতে তলিয়ে যায়। এ সমস্যার সমাধান দরকার। নইলে সামনের বর্ষাকালে আবারও ভোগান্তি পোহাতে হবে।’

নিরালার বাসিন্দা হাসিব হাসান বলেন, ‘নিরালা আবাসিকের রাস্তা অনেক নিচুতে। বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এ ভোগান্তির শেষ কবে জানি না।’

দৌলতপুরের বাসিন্দা হাসান মাহমুদ বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে দেখছি কেসিসি শুধু কাজই করছে। কাজের ফল আর ভোগ করতে পারছি না। সামনে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও বাড়বে।’

Advertisement

পেশায় একজন ইজিবাইক চালক আজমল গাজী। তিনি বলেন, ‘বর্ষা হলে ময়লাপোতা ক্রস করতে ভয় লাগে। রয়েল মোড়ের দিকে গাড়ি নিয়ে গেলে গাড়িতে পানি ওঠে। সিটি করপোরেশন রয়েল মোড়ের জলাবদ্ধতার বিষয়ে জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এটা দুঃখজনক।’

জলাবদ্ধতা খুলনা নগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা। জলাবদ্ধতা সমস্যা এবছর দ্বিগুণ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার।

তিনি বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। সঠিক পরিকল্পনা এবং দূরদর্শিতার অভাবে জলাবদ্ধতা এখন নগরবাসীর বিষফোড়া। বাবুল হাওলাদার আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নেই বললেই চলে। শহরের ভৌগোলিক অবস্থান এবং পানি ওঠা-নামার সঙ্গে সংগতি না রেখেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাল-বিল দখল এবং যত্রতত্র পলিথিন ফেলার কারণেও জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

কেসিসির প্রধান কনজারভেন্সি কোহিনুর জাহান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের কাজ চলমান। প্রতিটি ওয়ার্ডে ড্রেন পরিষ্কারের কাজ চলছে। মতিয়াখালি খাল এবং ক্ষেত্রখালি খাল পরিষ্কারের কার্যক্রম চলমান। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মকর্তাদের ট্যাগ করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসণে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রেখেছি। বর্তমানে ড্রেন পরিষ্কার করা হচ্ছে। মরা খালগুলো পুনরায় জীবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের চলমান। নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে চেষ্টা চলছে।

আরিফুর রহমান/এসআর/জিকেএস