জাতীয়

আওয়ামী লীগের মতো চাঁদাবাজি করলে টিকবে না

আওয়ামী লীগের মতো চাঁদাবাজি করলে টিকবে না

শ্রমিকদের উন্নয়নে কাজ করছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সংগঠনটির বর্তমানে প্রায় হাজারের মতো সহযোগী সংগঠন আছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই শ্রমিক সংগঠন গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাঠপর্যায়ে কাজ করতে না পারলেও বর্তমানে মাঠপর্যায়ে আবারো সক্রিয় তারা।

Advertisement

শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কার্যক্রম ও নানান বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। আতিকুর রহমান এর আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল মিরাজ।

জাগো নিউজ: শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

আতিকুর রহমান: মুক্তিযুদ্ধের আগেই ১৯৬৭ সালের ২৩ মে থেকে যাত্রা শুরু বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের। এমন এক সময়ে এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে যখন পৃথিবীজুড়ে ছিল কমিউনিস্টদের জয়জয়কার। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ট্রেড ইউনিয়নের ময়দান দখল করে নিয়েছিল। তারা ট্রেড ইউনিয়ন দখল করে শ্রমিকদের সমাজতান্ত্রিকতায় দিক্ষিত করছিল। কিন্তু তাদের মাধ্যমে শ্রমিকদের কোনো উন্নতি সম্ভব হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, শ্রমিকদের নৈতিক-আদর্শিক মানে উন্নীত করা এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়ন করে দেশ গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত হয়েছে এই সংগঠন।

Advertisement

আরও পড়ুন এক দশকে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ৮২৯৮ শ্রমিক শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠনের সুপারিশ সংকটে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন, ১৫ বছরেও হয়নি স্থায়ী অফিস

জাগো নিউজ: শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কাজ কী?

আতিকুর রহমান: এই সংগঠন প্রচলিত শ্রমিক সংগঠন থেকে আলাদা। আমরা শুধু শ্রমিকদের অধিকার নয়, তাদের নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি। নৈতিক শিক্ষা ও মোটিভেশনের মাধ্যমে সৎ ও দক্ষ জনবল সৃষ্টি করার চেষ্টা করি। আমরা তাদের দুনিয়ার অধিকার আদায়ের পাশাপাশি একজন সত্যিকার মুসলিম বানানোর কাজও করি।

জাগো নিউজ: আপনাদের কতগুলো সহযোগী সংগঠন আছে?

আতিকুর রহমান: আমাদের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত হাজারের বেশি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। রিকশা, গার্মেন্টস, বন্দর, নির্মাণ, ফার্নিচার, কৃষি সব জায়গায় আমাদের শ্রমিকদের আলাদা সংগঠন আছে। তারা নিয়মিত শ্রমিকদের সমস্যা নিরসনে কাজ করছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিগত সময়গুলোতে আপনারা কীভাবে কাজ করেছেন?

আতিকুর রহমান: যখনই যারা ক্ষমতায় আসছে, আমাদের কাজকে, আমাদের শ্রমিক সংগঠনগুলোকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক সংগঠন না হলেও রাষ্ট্রীয় শক্তির রোষানলে পড়তে হয়েছে। ঘরোয়া অনুষ্ঠান থেকেও আমাদের ভাইদের গ্রেফতার করেছে, রিমান্ডে নিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এখনো আমাদের অনেকের নামে মামলা চলমান রয়েছে। আমাদের মিছিল, সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি। ভিন্ন নামে কর্মসূচি করতে গেলে সেখানেও প্রশাসন হামলা চালিয়েছে। আমরা এসময় নেপথ্যে থেকে কাজ করেছি। প্রকাশ্যে অধিকার নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন প্রফিট বোনাস পরিশোধের দাবিতে এনইপিসি শ্রমিকদের মানববন্ধন শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে লভ্যাংশ দিচ্ছে না বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান গৃহকর্মী-যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতির সুপারিশ

জাগো নিউজ: বর্তমানে আপনারা কী এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছেন?

আতিকুর রহমান: বর্তমানে আমরা সাংগঠনিক সক্ষমতা অনুযায়ী মাঠে কাজ করছি। সরকারের বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে কাজ করছি। শ্রম আইন সংশোধনী কমিটিতে আমাদের প্রতিনিধি আছে। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে বডি আছে সেখানে আমরা আমাদের বক্তব্য রাখছি।

৫ আগস্টের পর শিল্প সেক্টরকে ধ্বংসের জন্য বড় পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেখানে সরকারের সঙ্গে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা আশুলিয়া, গাজীপুরে সমাবেশ করেছি, লিফলেট বিতরণ করেছি এবং শ্রমিকদের বুঝিয়েছি এমন পরিস্থিতি, এমন কাজ করা যাবে না যাতে অন্য কেউ সুবিধা নিতে পারে।

শ্রমিকের যে ১৮ দফা দাবি ছিল তা প্রণয়নেও আমাদের সংগঠন কাজ করছে। এছাড়া আমাদের ব্যাপক সেবামূলক কার্যক্রম চলছে। শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে আমরা তাদের আইন বোঝাচ্ছি। নারীদের অনেক অধিকার আইনে দেওয়া আছে। তাদের সে অধিকার কী হবে তা তাদের বোঝাচ্ছি।

আরও পড়ুন বিরূপ সময়ে সহায়তা কম, কখন ‘শ্রমিক কল্যাণ’ করবে ফাউন্ডেশন? দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ দেবে সরকার শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে লভ্যাংশ দিতে চায় না বিমা কোম্পানি

জাগো নিউজ: বিগত সরকারের সময়ে শ্রমিকদের অবস্থা কেমন ছিল?

আতিকুর রহমান: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ট্রেড ইউনিয়ন আমাদের রয়েছে। আমরা পরিবহন, গার্মেন্টস, রেল, স্থলবন্দর সব জায়গায় শ্রমিকদের সংগঠিত করে ফেডারেশন করেছি। বিগত সময় এসব ট্রেড ইউনিয়নও কাজ করতে পারেনি। আগে গার্মেন্টস, পরিবহন, বন্দর প্রতিটি জায়গায় একক আধিপত্য ছিল আওয়ামী লীগের। শ্রমিকদের থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজি করতো যুবলীগ, ছাত্রলীগ। গত ৫ আগস্টের পর এ জিনিস বন্ধ হয়। এ সময় আমরা প্রতিটি শ্রমিককে বলেছি যাতে কোনো শ্রমিক সংগঠন তাদের থেকে কোনোভাবে অন্যায্য চাঁদা না নিতে পারে। তারা যাতে অন্যায় ও জুলুম না করতে পারে, ভয় না পায়। যে কোনো প্রয়োজনে যাতে আমাদের কাছে আসে। এখন তারা আমাদের সঙ্গে আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমরা মাঠে আছি।

জাগো নিউজ: দেশের প্রতিটি স্তরে চাঁদাবাজির ঘটনা চলছে। তা বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন?

আতিকুর রহমান: আমরা আমাদের সাংগঠনিক সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিটি স্তরে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমরা যেখানে এ ধরনের কোনো অভিযোগ শুনি আমাদের ভাইয়েরা ছুটে যান যাতে কোনো শ্রমিককে চাঁদা দিতে না হয়। দেশে তো বড় নানান ঘটনা ঘটে। আমরা সামনে বড় পরিসরে কাজ করার চেষ্টা করছি।

জাগো নিউজ: চাঁদাবাজি বন্ধের এ পদক্ষেপে কাউকে বাধা মনে করছেন কি না?

আতিকুর রহমান: বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করেছে। যার জন্য ৫ আগস্ট ঘটেছে। এখনো যারা এ ধরনের কাজ করতে চায়, তা এক সময়ে এসে আর টিকবে না। হয়তো জনগণ সাময়িক মেনে নেয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আবারো প্রতিরোধ তৈরি হবে।

আরও পড়ুন ফরিদপুরে মিক্সার প্লান্টে বিস্ফোরণ, দুই শ্রমিক দগ্ধ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে তালিকাভুক্ত না হলে সরকারি দরপত্রে অংশ নয় শ্রমিকদের কল্যাণে ভবিষ্যৎ তহবিল

জাগো নিউজ: গার্মেন্টস শ্রমিকদের ক্ষোভ নিরসনে কী করাউচিত বলে মনে করেন?

আতিকুর রহমান: আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল অংশই পোশাকশিল্প থেকে আসে। আশির দশকে শ্রমিকদের যে সমস্যা ছিল তা এখনো আছে। মাত্র সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতনে তারা কাজ করেন, যা দিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবন চলতে পারে না। এ নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকার এর মধ্যে ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি করেছে, যা আগে ৫ শতাংশ ছিল। আমরা বলেছি শ্রমিকদের মজুরি ২৫ হাজার করতে। মালিকপক্ষের সঙ্গে সঙ্গে সরকারেরও দায়িত্ব আছে। আমরা সরকারকে বলেছি রাষ্ট্রের উদ্যোগে শ্রমিকদের এলাকায় স্কুল, হাসপাতাল, বাসস্থানের ব্যবস্থা করুন যাতে তাদের ব্যয় কমে আসে। মালিকরা বেতন বাড়ানোর চেষ্টা করবে অন্যদিকে সরকার এসব করতে পারে।

জাগো নিউজ: রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা জনজীবনে সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

আতিকুর রহমান: ৫ আগস্টের আন্দোলনে শ্রমিকদের বিশাল ভূমিকা ছিল। রিকশা শ্রমিকরাও অনেক সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। অনেকে শহীদও হয়েছেন।

আরও পড়ুন শ্রম আইন লঙ্ঘন করছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো দুই মাসে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২১৩ শ্রমিক নিহত: বিলস

তবে ঢাকা শহর ঘনবসতিপূর্ণ। এতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার করেও যানজট কমানো যাচ্ছে না। ৫ আগস্টের পর যখন ট্রাফিক ছিল না তখন যে যার মতো গাড়ি চালানো শুরু করে। তবে অনুমোদনহীনভাবে এভাবে সবাই রাস্তায় এলে রাজধানীর জনজীবন অচল হয়ে যাবে। তাই আমরা রিকশা শ্রমিকদের বলতে চাই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সরকার এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিলে এতে বিপাকে পড়তে পারেন। সরকারকেও বলবো অনুমোদন দেওয়ার সিস্টেম করুন এবং নিয়মের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করুন।

এএএম/এমএমএআর/এমএফএ/জিকেএস