ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারে ভালো নেই আবাসন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা না পাওয়ায় অনেকটা কালো মেঘ জমেছে এ খাতে। ব্যাংক লোনে জটিলতা, রাজনৈতিক বিরূপ পরিবেশ আর বিনিয়োগে অনাস্থায় ক্রমে নিম্নমুখী হচ্ছে আবাসন খাতের সূচক।
Advertisement
বিভিন্ন আবাসন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবের পর অনেকটা থমকে গেছে কেনা-বেচা। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা অগ্রসর হচ্ছে পরিস্থিতি। তবে সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতা-বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা, উচ্চ নিবন্ধন ফি, নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়া, ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধন না করাসহ বেশ কিছু কারণে সাভারসহ সারাদেশে আবাসন ব্যবসা ঝিমিয়ে পড়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়াও জীবনযাত্রায় উচ্চ ব্যয়ের কারণে সঞ্চয় ভেঙে ফ্ল্যাট কেনায় এই মুহূর্তে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই। আবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফ্ল্যাট-প্লটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ‘কালো টাকা’ বিনিয়োগের যে সুযোগ রাখা হয়, সংস্কারমুখী অন্তর্বর্তী সরকার সে বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেনি। ফলে সব শ্রেণির ক্রেতাদের মধ্যে সংশয় কাজ করছে বলে উঠে এসেছে সংশ্লিষ্টদের কথায়।
আরও পড়ুন জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কর কমাতে পারে সরকার দুর্দিন কাটছে না আবাসন ব্যবসায়ীদের দাম কমিয়েও ক্রেতা মিলছে না সিমেন্টেরআবাসন ব্যবসায়ী মাহফুজ আলম বলেন, সাভারে এ খাতের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। যারা ফ্ল্যাট বুকিং করছে তাদের অনেকেই এখন উদাসীন। বকেয়া কিস্তি পরিশোধেও দেখা দিয়েছে অনীহা। রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে এই খাত। নিশ্চয়তাহীনতায় ভুগে এই খাতে বিনিয়োগ করছেন না ক্রেতারা। এ পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে এই খাতে আমার মতো ব্যবসায়ীর অবস্থা আরও নাজুক হবে।
Advertisement
আবাসন ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম সবলু বলেন, ব্যবসা করতে এখন কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে লাভ দেখা যাচ্ছে না। বেশ কয়েকটি প্রকল্প ক্ষতির মুখে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। কাঁচামালের সঙ্গে বেড়েছে শ্রমের দাম। এছাড়া ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকায় এই ব্যবসায় বর্তমানে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। ফলে আমার মতো অনেক ব্যবসায়ীই এই ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতার অনিশ্চয়তা, নির্মাণসামগ্রীর উচ্চমূল্য এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ক্রেতাদেরও রয়েছে অনেক অভিযোগ। সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার বাসিন্দা হুমায়ন কবির বলেন, বহুদিনের ইচ্ছা ছিল একটি ফ্ল্যাট কিনবো। বুকিংও দিয়েছি। তবে এখনও বিনিয়োগে ভয় পাচ্ছি। আদৌ ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ে ভবন হস্তান্তর করতে পারবে কি না? সঠিক সময়ে হস্তান্তর করবে কি না? এমন নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরে ফিরে আসছে। এতে সাহস হারিয়ে ফেলছি।
সঠিক সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তরে অনিশ্চয়তা কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যে সময়ে ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছিলাম তখন নির্মাণ সামগ্রী ও শ্রমের দাম তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু এখন অনেকটাই বেড়ে গেছে। ফলে ব্যবসায়ীদের নির্মাণ খরচ বেড়ে গেছে। এ থেকেই এমন আশঙ্কা করছি।
আরেক ক্রেতা আজিজুল রহমান বলেন, জুলাইয়ের পর থেকে বিক্রেতাকে খুঁজে পাচ্ছি না। শুনেছি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। যোগাযোগই যেখানে সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে ফ্ল্যাট হস্তান্তর কীভাবে করবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। আমি যা ইনভেস্ট করেছি তা নিয়েও চিন্তায় আছি। বড্ড অসহায় লাগছে। জীবনের সবটুকু সঞ্চয় এখানে ইনভেস্ট করেছি। এখন নিজেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে বড় আতঙ্কের বিষয় নিম্নমানের কাজ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বৈধ নকশার। অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতিপত্র নিয়ে ভবন নির্মাণ করছেন। পরবর্তীতে রাজউক সেই ভবনে অভিযান পরিচালনা করে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে অনেক ক্রেতাই বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয় ডিটেল এরিয়া প্ল্যানের আওতাভুক্ত এলাকায় যেকোনো বহুতল ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন আবশ্যক। ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া রাজধানীকে বর্ধিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালেই মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোকে ডিটেল এরিয়া প্লানের (ড্যাব) আওতায় আনা হয়। ড্যাবের আওতাধীন এলাকায় অনুমোদন বিহীন প্রায় ৩ হাজার ৩৮২টি ভবন রয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রাজউকের জোন ৩/৩ এর অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী রঙ্গন মন্ডল বলেন, এলাকায় অনেক ভবন পাচ্ছি যেগুলোর মালিক খরচ কমাতে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করছেন। কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ করছেন তারা।
এফএ/জিকেএস