‘আমরা দুই চাচাতো ভাই দিনে স্কুলে যাই, রাতে ডিম বিক্রি করি। প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে সাগর পাড়ে আসি ২০-৩০টা ডিম নিয়ে। বিক্রি হলে বাড়িতে চলে যাই, বাড়িতে গিয়ে পড়তে বসি। সকালে আবার স্কুলে যাই। প্রতিদিন আমরা ডিম বিক্রি করা ছাড়াও অনেক টাকা বকশিশ পাই। আমি ক্লাস ফোরে পড়ি আর আমার ভাই ক্লাস টুতে পড়ে।’
Advertisement
সাবলীল ভাবেই কথাগুলো বলছিল কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ডিম বিক্রি করা ১২ বছরের শিশু ইউসুফ (১২)। সঙ্গে থাকা চাচাতো ভাই সম্পর্কেও জানালো শিশুটি।
এই দুই শিশুর একজন মো. ইউসুফ (১২), চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা একজন অটোরিকশার চালক। বড় ভাই থাকলেও সে অসুস্থ। তাই তার মা তাকে প্রতিদিন সিদ্ধ করা ডিম নিয়ে পাঠান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করতে। যেদিন পর্যটক বেশি থাকে সেদিন খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। আর যেদিন পর্যটক কম থাকে সেদিন বিক্রি করতে একটু দেরি হয়।
আরও পড়ুন- অটোর দাপটে দুর্দশায় প্যাডেল রিকশাচালকরা ‘দিবস কী জানি না, মাথায় টুকরি উঠলে আসে টাকা, চলে পেট’ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন আজঅন্যজন রাকিবুল (১০), দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবাও একজন অটোরিকশার চালক। তারা তিন ভাইবোন। বাবার একার আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। তাই ইউসুফের সঙ্গে ডিম বিক্রি করে সে। তারা দুজনই কুয়াকাটা লতাচাপলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পশ্চিম কুয়াকাটা গ্রামের বাসিন্দা।
Advertisement
কোথা থেকে কত টাকায় ডিম ক্রয় করে জানতে চাইলে তারা দুজনই জানায়, ‘আমরা কিছু জানি না, কোথা থেকে ডিম কেনেন মা। আমাদেরকে ডিম দিয়ে বলেন ৩০ টাকা করে বিক্রি করবা, দু’জনে একসঙ্গে থাকবা।’
তাদের কথার মিলও পাওয়া গেলো। একজন আরেকজনের কাঁধে হাত দিয়ে পাশাপাশি দুটি ছোট্ট বালতি হাতে নিয়ে হাঁটছে আর ডিম বিক্রি করছে। শুধু তাই নয়, একজন ডিম বিক্রি করলে অন্যজন পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না। তাদের মধ্যে একজনের পরনে তখনও স্কুলের ইউনিফর্ম পরা। কতক্ষণ হাঁটছে আবার দুজন গল্প করছে।
কত টাকার বিক্রি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে ইউসুফ হিসাব করে জানায়, ১৭০ টাকা পকেটে আছে। তার ১২০ টাকা ডিম বিক্রির। আর ৫০ টাকা বকশিশ পেয়েছে সে।
শুধু ইউসুফ আর রাকিবুল নয়, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এভাবে দেখা মিলবে প্রায় শতাধিক শিশুর। তারা কেউ ঘোড়া চালায়, কেউ চা-কফি বিক্রি করে, কেউ বেঞ্চ পাহারা দেয়, কেউ ফিসফ্রাই মার্কেটে কাজ করে।
Advertisement
এদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদের অনেকেই স্কুল ছেড়েছে। কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। কেউ আবার পরিবারের হাল ধরেছে।
তবে স্থানীয় সংগঠকেরা বলছেন, কর্মসংস্থান থাকায় এসব শিশুরা এখানে ঝুঁকছে। যে কারণে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ কম হচ্ছে।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু জানান, কুয়াকাটায় শুধু ডিম বিক্রি না, অনেক পেশাতেই শিশুদেরকে দেখা যায়। তবে এত ছোট শিশুদের এই ধরনের কাজ করানো ঠিক না। কারণ ওরা লেখাপড়া থেকে বিমুখ হবে। আর সৈকতে নগদ অর্থ মেলায় অনেকেই ছোট শিশুদেরকে ইনকামে ছেড়ে দিচ্ছে। আবার অনেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে এখানে থেকে যাচ্ছে। এগুলোর বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি পরিবারেরও আরও সচেতন হওয়া উচিত।
এফএ/এএসএম