দেশজুড়ে

শৈশব পুড়ছে ইটভাটায়

শৈশব পুড়ছে ইটভাটায়

লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলায় অবৈধ ইটভাটায় বাড়ছে শিশুশ্রমের প্রবণতা। দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই জেলার অধিকাংশ ইটভাটায় ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বল নজরদারির কারণেই এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে।

Advertisement

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, শিশুরা মাটি বহন, ইট তৈরি, পোড়ানো, শুকানো ও পরিবহনের মতো কঠোর পরিশ্রমের কাজে নিযুক্ত। দৈনিক মজুরি হিসেবে তাদের দেওয়া হয় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ১০০০টি ইট ওল্টানোর জন্য তারা পায় মাত্র ১৫ টাকা।

শিশু শ্রমিকরা জানায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাটুনি শেষে তারা যা পায়, তা দিয়ে ঠিকমতো খাবার জোটানোও কঠিন।

আরও পড়ুন- ‘দিবস কী জানি না, মাথায় টুকরি উঠলে আসে টাকা, চলে পেট’ অটোর দাপটে দুর্দশায় প্যাডেল রিকশাচালকরা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন আজ

আদিতমারী উপজেলার একটি ইটভাটায় কাজ করতে আসা ৯ বছর বয়সী মামুন (ছদ্মনাম) জানায়, সে বাবার সঙ্গে ভাটায় কাজ করে।

Advertisement

মামুনের বাবা বলেন, অভাবের তাড়নায় পড়ালেখা বন্ধ করে সন্তানকে কাজে লাগাতে হচ্ছে। দু’বেলা খেতে পারলেই আল্লাহর রহমত। শিক্ষা-চিকিৎসার কথা ভাবার সুযোগই নেই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইটভাটার পরিবেশ শিশুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আজমল হক জানান, বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে ভাটায় কর্মরত শিশুরা চর্মরোগ, রক্তস্বল্পতা, হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিসের ঝুঁকিতে থাকে। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় থাকলে তাদের স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হয়।

লালমনিরহাট পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় মোট ৪৮টি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে ২৫টির বৈধ কাগজপত্র নেই। অধিকাংশ ভাটা পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। এসব অবৈধ ভাটাগুলো কৃষিজমির মাটি কেটে ইট প্রস্তুত করছে এবং কয়লার সঙ্গে কাঠ পুড়িয়ে বনজ সম্পদ উজাড় করছে। ফলে পরিবেশ ও খাদ্য উৎপাদন উভয়ই হুমকির মুখে পড়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সাংবাদিকরা মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় ইটভাটা, শব্দদূষণ, শিশু শ্রম ও পরিবেশ দূষণের বিষয়টি তুললেও এখন পর্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হাকিম বলেন, পরিবেশের ছাড়পত্র না পাওয়ায় কিছু ভাটার লাইসেন্স নবায়ন হয়নি। কাঠ পোড়ানো হচ্ছে না, শুধুমাত্র অল্প কিছু খড়ি আগুন ধরানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় জানান, চলতি বছর বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত থাকবে।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশবিদরা বলছেন, অবিলম্বে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে শিশুদের স্কুলে ফেরানোর উদ্যোগ না নিলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয় আরও বাড়বে।

জেলা প্রশাসক এইচ এম রবিক হায়দার বলেন, জেলায় ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং শিশুশ্রম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এফএ/এএসএম