মতামত

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও শ্রম অধিকারের চারদিক

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও শ্রম অধিকারের চারদিক

এবারের মে দিবস এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। সংস্কারের ডামাডোলে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই কমিশন ইতিমধ্যে রিপোর্টও দিয়েছে। এবং রিপোর্টে শ্রম অধিকারের বিষয়গুলো নতুন করে উচ্চারিত হয়েছে।

Advertisement

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশন শ্রম বিষয়ে অংশীজন ও বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে সম্প্রতি দাখিল করে।

সবার জন্য নিরাপদ কাজ, স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরির জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাঠামো এবং নীতিমালা সর্বজনীন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও হালনাগাদ করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন তারা।

নিরাপদ কাজ, স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সবার জন্য নিরাপদ কাজ, স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাঠামো এবং নীতিমালা সর্বজনীন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও হালনাগাদ করা। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ সংশোধন করে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংজ্ঞা এবং বিধান আধুনিকায়ন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ চিহ্নিত করে সুরক্ষা ও ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত, সেইফটি কমিটি গঠন ও প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা।’

Advertisement

সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, ‘কৃষিশ্রমিকদের আইনি কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তি, আধুনিক চ্যালেঞ্জ (অও, ডিজিটাল, অতিমারি, জলবায়ু পরিবর্তন) মোকাবিলায় নীতিমালা হালনাগাদ, জাতীয় শিল্প-স্বাস্থ্য-সেইফটি কাউন্সিল কার্যকরকরণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক পৃথক আইন এবং কর্তৃপক্ষ গঠন করা। আইএলও কনভেনশন ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ অনুস্বাক্ষরের মাধ্যমে শ্রমিকদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।’

দুই.বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকারের দিন হিসেবে মে দিবস পালন করা হয়। দিবসকেন্দ্রিক আনুষ্ঠানিকতায় যতটা জোরেশোরে শ্রমিক অধিকারের কথা উচ্চারিত হয়, বাস্তবের সঙ্গে তার বিস্তর ব্যবধান। বাস্তবতা হচ্ছে, শ্রমিকদের বঞ্চনার ইতিহাস নতুন নয়। দেশে দেশে, কালে কালে নানানভাবে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষ। রাতদিন পরিশ্রম করলেও তারা ঠিকমতো মজুরি পায় না। তার ওপর বেতন বকেয়া থাকা, কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই, লকআউট- এসব কারণেও শ্রমিকদের দুর্দশার সীমা থাকে না।

মে দিবস নিয়ে যতটা তর্জন গর্জন হয় ততটা বর্ষণ হয় না। এখনো পর্বতপ্রমাণ বেকার সমস্যা। শ্রমিকরা অধিকার বঞ্চিত। নানান রকম বৈষম্যেরও শিকার। সেখানে মে দিবস পালন কেবলই আনুষ্ঠানিকতালব্ধ আয়োজন হয়তো বা।

সভ্যতার চাকা এগিয়েছে শ্রমদানকারী শক্তির শ্রম, ঘাম আর রক্তের ওপর দিয়ে। এ প্রেক্ষাপটে একজন শ্রমিক অবশ্যই মূল্যায়িত হবে তার অবস্থান থেকেই। কিন্তু শ্রমিকের ইতিহাস বঞ্চনার ইতিহাস। শ্রমের মূল্য দিতে বরাবরই কার্পণ্য করে মালিক। অথচ শ্রমিকের ঘামে-শ্রমেই ঘুরে কলকারখানার চাকা, ওঠে ইমারত, বাড়ে উৎপাদন। বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকারের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হলেও এখনো রয়ে গেছে নানান অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনা।

Advertisement

কলকারখানাগুলোতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। যখন তখন চাকরিচ্যুতি, ন্যায্য মজুরি না পাওয়া, নারী-পুরুষ লিঙ্গভেদে মজুরির বৈষম্য, সঠিক কর্মপরিবেশ না থাকা, শ্রমিকনিরাপত্তার অভাবসহ রয়ে গেছে অনেক অসুবিধা। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ শ্রমশক্তি দেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়, তাদের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বেসরকারি পর্যায়ে তিন থেকে চার লাখ। বাকিরা প্রায় বেকারই থেকে যায়। এ অবস্থায় সস্তায় শ্রম কেনার একটি প্রবণতা দেখা যায় মালিকদের মধ্যে। এতে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হন।

কর্মস্থলের পরিবেশ নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। অনেক ফ্যাক্টরির কাজের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ঝুঁকিমুক্ত নয়। ফলে কাজ করতে গিয়ে অনেককে জীবনও দিতে হয়। সঠিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক শ্রমিকের জীবন গেছে। তামাকজাত কারখানা, চামড়া, লবণ, জাহাজ ভাঙাসহ এজাতীয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্যজনিত নানান সমস্যায় ভুগতে হয় শ্রমিকদের। কিন্তু তারা কোনো চিকিৎসা সুবিধা পায় না, মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণও পাওয়া যায় না। সার্বিকভাবে বাংলাদেশে শ্রমিকদের জীবন তাদের জন্য কল্যাণকর নয়— এটা বলা যায়। অনেক ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে হয় তাদের। কিন্তু সেখানেও নানা ঝক্কি। পুলিশের লাঠিপেটা, মালিকের চোখরাঙানি। চাকরিচ্যুতির ভয়। এ যেন অমোঘ নিয়তি।

তিন.বাংলাদেশে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় শিশুশ্রমিকরা। শিশুশ্রম আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। কিন্তু বিশ্বের কোনো দেশই শিশুশ্রমের বাইরে নয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা আরও প্রকট। বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই শিশুশ্রমে নিয়োজিত। মূলত দরিদ্র পরিবারে অর্থনৈতিক সহায়তার জন্যই এদের শ্রমে নিযুক্ত হতে হয়। এরা শুধু দিনান্ত পরিশ্রমই করে না, বরং তাদের এমন সব কাজ করতে হয়, যা তাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

শিশুশ্রম অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং সহজলভ্য হওয়ায় বাংলাদেশের শিশুশ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অপরাধমূলক ও অনৈতিক কাজের সঙ্গে তাদের যুক্ত করা হচ্ছে জোর করে। বলা হয়, আজকের শিশুই আগামী দিনের সম্পদ। অধিকারবঞ্চিত এসব শিশুকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে না পারলে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কি আদৌ সম্ভব? অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গার্মেন্ট সেক্টর শিশুশ্রমমুক্ত করা গেছে। তাহলে অন্যান্য সেক্টর শিশুশ্রমমুক্ত করতে বাধা কোথায়? একদিকে স্কুলগামী শিশুদের এক বিরাট অংশ শিশুশ্রমে বাধ্য হচ্ছে, অন্যদিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা। এই বৈপরিত্যের মানে কী?

বাংলাদেশে নারী শ্রমিকরাও বৈষম্যের শিকার। নারী পুরুষ সমতার বিশ্ব গড়ে ওঠার কথা থাকলেও শুধু নারী হওয়ার কারণে একই শ্রমের ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিক ও নারী শ্রমিকের মজুরি পার্থক্য রয়ে গেছে। ধরা যাক, একজন পুরুষ শ্রমিক সারা দিন ইট ভাঙার কাজ করে তিনশ টাকা পান, এক্ষেত্রে নারী শ্রমিক পাবেন ২৫০ টাকা। এর কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। তবু চলছে এটাই। আসলে নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে নারীর সম-অধিকার, সম্পদ ও ভূমিতে সম-অধিকার, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীর সমান সুযোগ ও অংশীদারত্ব এখনো নিশ্চিত হয়নি। বৈষম্য রয়েই যাচ্ছে।

বাংলাদেশে রপ্তানি খাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থানকারী গার্মেন্টস শিল্প খাতের শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলোর অবকাঠামো, কর্মপরিবেশ, শ্রমিক নিরাপত্তা ও অধিকারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। কিন্তু গার্মেন্ট মালিকরা এসব বাস্তবায়ন না করায় একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ, অবহেলাজনিত কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়া, ক্ষতিপূরণ এবং আইনি দুর্বলতা ইত্যাদি কারণে প্রতি বছর নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। কিন্তু তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। অথচ মারাত্মক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার জন্য ১৯৫৫ সালের আইনে নিহত শ্রমিকের সারা জীবনের আয়ের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার বিধান রয়েছে।

চার.বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস জনশক্তি রপ্তানি। বিদেশের মাটিতে ঘাম-শ্রম ঝরিয়ে লাখ লাখ প্রবাসী এ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এসব শ্রমিকের অনেকেই বিদেশের মাটিতে গিয়ে নানান রকম প্রতারণার শিকার হন। যে বেতন দেওয়ার কথা, সেটি দেওয়া হয় না। যে কাজ করার কথা, তার চেয়ে নিম্নমানের কাজ দেওয়া হয়।

এছাড়া থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও মানসম্মত হয় না। এসব কারণে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের যেমন মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়, তেমনি তারা কাঙ্ক্ষিত অর্থ উপার্জন করতে না পারায় রেমিট্যান্সপ্রবাহের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে শুধু শ্রমিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতিও। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যদি তাদের ওপর অর্পিত কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতেন, তাহলে এ সমস্যার উদ্ভব হতো না।

লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে তারা সামান্য আয় করলে নিজে চলবে কী আর দেশেই বা পাঠাবে কী। এ অবস্থায় শ্রমিকরা যাতে প্রতিশ্রুত বেতন পায়, সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা। অভিযোগের তীরটা সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের প্রতিও। বাংলাদেশি শ্রমিক অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বাংলাদেশ দূতাবাসের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে শ্রমিকদের সমস্যা দেখা। কিন্তু সমস্যা দেখা তো দূরের কথা, শ্রমিকরা তাদের সমস্যা জানাতে গিয়ে দূতাবাস কর্মকর্তাদের দেখাটা পর্যন্ত পায় না। এসব বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সবার সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিত।

আশার কথা হচ্ছে, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য ইন্টারনাল কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন৷ গত ২৩ এপ্রিল সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বিষয়ক এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ে আমরা একটা ইন্টারনাল কমিটি করবো৷ এই কমিটি সবকিছু বিবেচনা করে কাজ করবে৷ আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে যতটুকু বাস্তবায়ন করা যায় তার সবই করা হবে৷ তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কী বললেন তার জন্য অপেক্ষা না করে আমরা পূর্ণাঙ্গ এই রিপোর্ট নিয়ে কাজ করবো। উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বোর্ডের প্রয়োজন আছে৷ আমি শুনেছি ট্যানারি মালিকরা অনেকের বেতন বাড়িয়েছেন আবার অনেকের বেতন বাড়াননি৷ পুরো বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করবো৷

পাঁচ.বস্তুত দিন দিন শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি নতুনমাত্রা পাচ্ছে। এজন্য মে দিবসও আসছে নতুন ধ্যানধারণা নিয়ে। একসময় কেবল সংগঠিত শিল্প-শ্রমিকদের কাছেই এ দিবসের আবেদন ছিল। তারা সমাজ বিপ্লবের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ দিনে নতুন করে শপথ গ্রহণ করত। শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে নতুন ও জোরদার লড়াইয়ের ডাক দিত। কিন্তু এখন এর পরিসর আরও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। শুধু কলকারখানার শ্রমিক নয়, কায়িকশ্রমে যুক্ত সবার কাছেই মে দিবস অনুপ্রেরণার দিন। এমনকি কৃষি খাতে নিযুক্ত মজুরদের কাছেও পৌঁছে গেছে এ দিবসের মর্মবাণী- কাজের সময় ৮ ঘণ্টা হতে হবে।

১৮৮৬ সালের এই দিনে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমসময় নির্ধারণের দাবিতে শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করছিল তখন তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল। রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল হে মার্কেট। তাতে শ্রমিকদের আন্দোলন থেমে যায়নি, বরং তা আরও শক্তিশালী হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আট ঘণ্টা শ্রমসময়ের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই থেকে সারা দুনিয়ার শ্রমিক সমাজ আজকের দিনটিকে পরম শ্রদ্ধাভরে পালন করে আসছে।

শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষণের জন্যই প্রতি বছর পালন করা হয় মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে দিনটি ১৮৯০ সালের ১ মে থেকে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। সভা-সেমিনারে উচ্চারিত হয়েছে অগ্নিউদ্গারী ভাষণ। মে দিবস নিয়ে যতটা তর্জন গর্জন হয় ততটা বর্ষণ হয় না।

আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এখনো পর্বতপ্রমাণ বেকার সমস্যা। শ্রমিকরা অধিকার থেকে বঞ্চিত। নানান রকম বৈষম্যেরও শিকার। সেখানে মে দিবস পালন কেবলই আনুষ্ঠানিকতালব্ধ আয়োজন হয়তো বা। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধতাড়িত সমাজব্যবস্থা এই অন্ধকারে পথ দেখাতে পারে। এই আত্মোপলব্ধি কাজ করুক সবার মধ্যে। এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট। ডেপুটি এডিটর, জাগো নিউজ। drharun.press@gmail.com

এইচআর/এএসএম