সন্দেহ নেই চট্টগ্রাম টেস্টে অনেক প্রাপ্তি আছে। যা বলে ও লিখে শেষ করা কঠিন। ওপেনার সাদমানের ২৭ মাস পর টেস্ট সেঞ্চুরি। মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যারিয়ারসেরা অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স। এক সঙ্গে অনেকগুলো কৃতিত্বর অধিকারী হয়ে রীতিমত শিরোনামে উঠে আসা। সাথে তাইজুল ইসলামের ৬ উইকেট শিকারও প্রশংসার দাবি রাখে। টেস্ট পিছু হিসেবে করলে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে অনেক নামী ও লদ্ধ প্রতিষ্ঠিত তারকা স্পিনারের চেয়ে তাইজুল কম সময়ে ১৬ বার ৫ বা তার বেশি উইকেট শিকারির কৃতিত্বের অধিকারী। যার যোগফল ইনিংস ও ১০৬ রানে জয় এবং সিলেট টেস্টে ৩ উইকেটে হারের প্রতিশোধ সুদে আসলে তুলে জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করা।
Advertisement
এসব কৃতিত্বের ফিরিস্তিই শেষ কথা নয়। পাশাপাশি আরও একটি কথাও অনেকের মুখে মুখে, আজ বুধবার বিকেল থেকেই সচেতন ক্রিকেট অনুরাগীর মনে প্রশ্ন, সিলেটে ফাস্ট-বাউন্সি ট্র্যাকে মুজারাবানির বোলিংয়ে ধরাশায়ী নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দেখা গেল, বোঝাও গেল, পেস বোলিং সহায় বা স্পোর্টিং পিচে আসলে এখনো পারে না বাংলাদেশ।
ফলে জিম্বাবুয়ের মত টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে সবার নিচে থাকা দলকে হারাতে শেষ হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিতে হলো সেই স্পিন সহায় পিচ। চট্টগ্রামে ব্যাটিং সহায় পাশাপাশি স্পিন উইকেটে স্পিনারদের হাত ধরেই সিরিজ হারের লজ্জা এড়ালো টাইগাররা।
চট্টগ্রাম ও সিলেট টেস্টের পারফরম্যান্স ও পরিণতি সুস্পষ্ট জানিয়ে দিলো, বাংলাদেশের এখনো পেসারদের হাত ধরে জিম্বাবুয়ের মত তলানিতে পরে থাকা দলকে হারানোরও ক্ষমতা নেই। বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেকের পর দীর্ঘদিন যার ব্যাট ছিল সবচেয়ে বিশ্বস্ত আর আস্থার প্রতীক, সেই হাবিবুল বাশার সুমন হতাশ-মনোক্ষুণ্ন। তার মুখেও আক্ষেপমাখা সংলাপ, ‘এটা সত্য দিন শেষে টেস্ট জয়ই শেষ কথা। একটা টেস্ট জিততে পারা অবশ্যই কৃতিত্বের। তাই চট্টগ্রামের টেস্ট জয়কে আমি হেলাফেলা করবো না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটি টেস্ট হেরেই আমরা নতুন পথে হাঁটা বাদ দিয়ে আবার পুরনো পথে হাঁটতে শুরু করলাম। যা দেখতে খুব খারাপ লাগলো। আর এভাবে হেঁটে সামনে আগানোও যাবে না।’
Advertisement
সুমনের ব্যাখ্যা, ‘টেস্ট ক্রিকেটে আমরা স্পোর্টিং পিচে ফাস্টবোলারদের হাত ধরেও জিততে শুরু করেছিলাম। আমরা দেশের মাটিতেও পিচের হেল্প ছাড়া জেতার সামর্থ্য অর্জন করেছিলাম। টেস্ট জিততে স্পিন সহায় উইকেটের দরকার হচ্ছিল না। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এক গাদা স্পিনারও লাগেনি। ফাস্ট বোলাররা ভারো করছিল। আমরা নিউজিল্যান্ডের মত দেশের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে পেসারদের হাত ধরে জিতেছি। ঘরের মাঠে আফগানিস্তান আর আয়ারল্যান্ডের সাথে পেস সহায় ট্র্যাকে খেলেও পেসারদের বোলিং কার্যকারিতায় টেস্ট জিতেছি।’
‘কিন্তু এবার দেখি জিম্বাবুয়ের মতো দলকে হারাতে আমাদের আবার উইকেটের হেল্প দরকার হলো। আমরা স্পিনিং ট্র্যাক করে জিতলাম। এটা হতাশার। এটা কোন কৃতিত্ব নয়। বরং গ্লানির। হ্যাঁ, এটা অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের সাথে হলে আমি এতটুকু খারাপ বা ছোট করে দেখতাম না। বরং বলতাম আমরা ওই বিশ্বমানের দলকে হারাতে আমাদের সুইটেবল কন্ডিশনে খেলেছি। কিন্তু জিম্বাবুয়ের মতো দলকে হারাতে কেন অমন উইকেটে খেলা? এটা মেনে নেওয়া কঠিন।’
জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচকের শেষ কথা, ‘জিম্বাবুয়ের সাথে একটা টেস্ট ম্যাচ হারার পরই আমরা একদম হান্ড্রেড পারসেন্ট ইউটার্ন নিলাম। এটা মানা যায় না। একটা টেস্ট ম্যাচ আমরা ভালো খেলিনি, তাতে কি? তাই বলে পুরনো ফর্মুলায় ফিরে যেতে হবে? এটা ঠিক না। দিস ইজ নট গুড থিংকিং। আমাদের ক্রিকেটের জন্য এটা ব্যাড সাইন। এরকম উইকেট বানিয়ে যদি আমরা পুরনো ফর্মুলায় ফিরে যাই তাহলে আমরা আবার শুধু দেশেই জিতবো। বাইরে গিয়ে আর পারবো না।’
এআরবি/এমএমআর/জিকেএস
Advertisement