অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই

শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই

অব্যাহত দরপতনের বৃত্তে আটকে রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রতিনিয়ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা তত ভারি হচ্ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের হতাশা। বিনিয়োগ করা পুঁজি হারি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ।

Advertisement

বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছেন। বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নামলেও বাজার পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজার যেন ততো খাদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় বুধবার (৩০ এপ্রিল) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনের অংশ নেওয়া বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে শেষ ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসইতে ১২ কার্যদিবস দরপতন হলো। আর সিএসইতে টানা ১৩ কার্যদিবস দরপতন হয়েছে।

শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হওয়ায় মঙ্গলবার মতিঝিলে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সামনে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। এসব বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে অপসারণ ও তার দুর্নীতি দ্রুত অনুসন্ধান করার দাবি জানান বিনিয়োগকারীরা।

Advertisement

এর আগে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবস এবং তার আগে সপ্তাহে চার কার্যদিবস অর্থাৎ টানা নয় কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ডিএসইতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে মূল্যসূচক। অবশ্য সিএসইতে পতনের ধারা অব্যাহত থাকে। আর সোমবার ও মঙ্গলবার ডিএসই ও সিএসই উভয় বাজারে দরপতন হয়।

এ পরিস্থিতিতে বুধবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচক ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেন পর হতেই বদলে যায় বাজারের চিত্র।

দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় নাম লেখাতে থাকে। অবশ্য এর মধ্যেও দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে বেশিরভাগ মিউচুয়াল ফান্ড। ফলে ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কামার পাশাপাশি প্রধান মূল্যসূচক কমলেও দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যক মিউচুয়াল ফান্ড।

দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ১৫৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৫টির। আর ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

Advertisement

ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৩টির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ৯৪টির দাম কমেছে। আর ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৩৩টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৩৬টির দাম কমেছে এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এছাড়া বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩২টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৫টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর ১৮টি মিউচুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৬টির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সার্বিকভাবে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৯১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮২২ পয়েন্টে নেমে গেছে।

প্রধান মূল্যসূচক কমলেও পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩২৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯১ কোটি ৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৭৬ টাকার। ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিচ হ্যাচারি।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বেক্সিমকো ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, লাভেলো আইসক্রিম, উত্তরা ব্যাংক, মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স এবং শাহজিবাজার পাওয়ার।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৬টির এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

এমএএস/এমএস