‘২২৭টি মামলা হয়েছে ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।’ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এমন বক্তব্যটি ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ফরেনসিক রিপোর্টে এর প্রমাণ মিলেছে।
Advertisement
ছয় মিনিট এক সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যায়, ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে। এজন্য ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। এবার আসতে পারলে শুধু সংস্কার করা হবে। একই সঙ্গে বাড়িঘর জ্বালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি পুলিশের চাকরি করা নিয়েও হুমকি দেন।’
এমন রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বুধবার (৩০ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রসিকিশন টিম থেকে দায়ের করা এমন অভিযোগের ওপর একইদিনে শুনানিও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতকে জানান, তদন্ত সংস্থা অডিওটির ফরেনসিক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে যে, এটি শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর। এই অডিও ক্লিপটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
Advertisement
প্রসিকিউটর জানিয়েছে, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ওই অডিওতে শোনা যায়, ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।’ অপর পাশ থেকে বলছে জি, জি। শেখ হাসিনার অডিও বক্তব্যের ফরেনসিক প্রমাণ মিলেছে, সে বক্তব্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করা এবং হুমকি পুলিশ ও এই মামলার সাক্ষীদেরকে দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতকে আরও জানান, গত বছরের ২৮ অক্টোবর মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে শাকিল আলমকে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই সময় শেখ হাসিনার বক্তব্যটি এআই জেনারেটেড ছিল বলে অনেকে দাবি করেছেন। তবে মুঠোফোনে কথোপকথনের অডিওটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কথোপকথনটি শেখ হাসিনা ও শাকিলের মধ্যেই হয়েছে বলে উঠে আসে। ফরেনসিক প্রতিবেদনে এর প্রমাণও মিলেছে।
শুনানি শেষে অডিও বার্তায় হুমকি দেওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দুজনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৫ মে তাদের জবাব দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপর জন হলেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে শাকিল আলম।
Advertisement
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৩০ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতে সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন টিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মিলেছে ফরেনসিক প্রমাণ ‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি’ অডিওটি শেখ হাসিনার ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’, এমন মন্তব্যে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বিতর্কিত অডিও ক্লিপটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই।
মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত ও হুমকি সৃষ্টির জন্যই এ বক্তব্য দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এমন অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।
এ সংক্রান্ত ফরেনসিক প্রমাণ পেয়েছে ক্রিমিনাল ডিপার্টমেন্ট সিআইডি। এর ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি নিয়ে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আদালত আগামী ১৫ মে তাদের এ সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। জনরোষের ভয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের হিসাব মতে, অভ্যুত্থানের সময় হাসিনার সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী ও তার দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলাসহ সহিংসতায় ১৪শ’ মানুষ খুন হয়েছেন। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এর ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হয়, যেখানে শেখ হাসিনাসহ তার সরকার, দল ও জোটের অনেক সহযোগীর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ভারতে আশ্রিত হাসিনার বক্তব্য বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝেমধ্যে কিছু অডিও ফাঁস হয়। এসব বক্তব্যের বেশিরভাগই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে দেখে নেওয়ার হুমকি বলে প্রতীয়মান হয়। এমনই একটি অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। ’
এফএইচ/এসএইচএস/এমআইএইচএস/এএসএম