ছয় মাসের মধ্যে দেশের সব ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণসহ আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা সংস্কারে ১১ দফা দাবি দিয়েছে ছাত্রশিবির। রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কেন্দ্রীয় মাদরাসা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এসব দাবি জানায়।
Advertisement
কেন্দ্রীয় মাদরাসা কার্যক্রম সম্পাদক আলাউদ্দিন আবিরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পাদক মু’তাসিম বিল্লাহ শাহেদী, শিক্ষা সম্পাদক আব্দুল মোহাইমেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হাফেজ আবু মুসা, ঢাকা মহানগর পূর্ব সভাপতি মোজাফফর হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এছাড়াও মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভাগের দায়িত্বশীলরাসহ বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি। ইসলামি মূল্যবোধে উজ্জীবিত থেকে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনের সুযোগ নিশ্চিত করতেই মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার অবকাঠামোগত ও চাহিদার আলোকে সংস্কার প্রয়োজন। মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পিছিয়ে রেখে সমৃদ্ধ জাতি গড়া সম্ভব নয়।
নেতারা আরও বলেন, মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি বৈষম্য করা দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রাখার নামান্তর। ইসলামি জ্ঞান, নৈতিকতা ও আধুনিক দক্ষতায় সুসজ্জিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
Advertisement
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিবগাতুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ঐতিহ্য ও গৌরবের ধারক। তবে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই শিক্ষাব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। মাদরাসা শিক্ষার্থীরা অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন প্রতিক্ষেত্রে। বিশেষ করে ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষক এমপিও আওতাভুক্ত নয় এবং যারা আছেন, তাদেরও যথাযথ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না। দেশের অগ্রগতির জন্য আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন এবং জাতীয় শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি জরুরি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা খাতে বরাবরই বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল। তার মধ্যেও মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি চরম বৈষম্য করা হয়। গত অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বাজেট বরাদ্দ ছিল মাত্র ১.৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, যদিও বর্তমান সময়ের চাহিদার আলোকে পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু পুরো মাদরাসা শিক্ষা (ইবতেদায়ি, দাখিল, আলিম) ও কারিগরি শিক্ষার জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এ থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, মাদরাসা শিক্ষাকে কী ভয়াবহ অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, মাদরাসা শিক্ষা সংস্কারে আমাদের ১১ দফা দাবি তুলে ধরছি।
দাবিগুলো হলো১. ছয় মাসের মধ্যে সব ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জটিল আইন ও বিধি সহজতর করতে হবে।২. দাখিল ও আলিম পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু করতে হবে।৩. এসএসসি ও এইচএসসির মতো দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় নম্বরের সমতা বিধান করতে হবে।৪. প্রতিটি জেলা শহরে একটি করে কামিল মাদরাসা জাতীয়করণ করতে হবে।৫. ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নিশ্চিত করা এবং উপস্থিতির ভিত্তিতে চূড়ান্ত পরীক্ষার নম্বর নির্ধারণ করতে হবে। ফলাফল প্রকাশের তিন মাসের মধ্যে সনদ হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হবে।৬. সব ফাজিল ও কামিল মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু, সেশন জট নিরসন, যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন, নকলমুক্ত পরীক্ষা ও উত্তরপত্রের যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে।৭. অনার্স পর্যায়ে দ্রুত বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং প্রিলিমিনারি সিলেবাসে মাদরাসা শিক্ষার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।৮. মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, ডিজি অফিস ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে মাদরাসা শিক্ষার্থী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।৯. প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের আদলে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।১০. সব মাদরাসায় কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞান ল্যাব (যেখানে বিজ্ঞান বিভাগ আছে) এবং উন্নতমানের লাইব্রেরি স্থাপন ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে।১১. ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণা সেল গঠন, বাজেট বরাদ্দ এবং জেলা পর্যায়ে আরবি ভাষা কোর্স চালু করতে হবে।
Advertisement
এএএম/এমআইএইচএস/জিকেএস