রাজনীতি

তারুণ্যে গুরুত্ব, ছাত্র আন্দোলন-নাগরিক কমিটি সদস্যদের অগ্রাধিকার

তারুণ্যে গুরুত্ব, ছাত্র আন্দোলন-নাগরিক কমিটি সদস্যদের অগ্রাধিকার

নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা দিতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রয়োজন নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন। আর এই নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতেই সারাদেশে আগামী দুই মাসের মধ্যে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে তরুণদের এ দলটি।

Advertisement

দলীয় সূত্র বলছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে এমন সব ব্যক্তিদের দায়িত্বে আনা হবে যারা এনসিপির প্রতি ‘ডেডিকেটেড’ থাকবেন। মানবেন কেন্দ্রীয় নির্দেশনা। থাকবে স্বচ্ছতা। তারুণ্য ও বিচক্ষণতাপূর্ণ ব্যক্তিরাও দলের জেলা-উপজেলার কমিটিতে পদে আসতে পারেন। কমিটিতে পদ পেতে অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, সিভিল সোসাইটির ব্যক্তিরাও আছেন। তবে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিতে থাকা ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন।

মৌলিক সংস্কারে জোর

তবে কমিটি গঠনে অগ্রগতি থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারে জোর দিচ্ছে এনসিপি। দলটির ভাষ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন সংবিধান রচনা অপরিহার্য। দেশে ভবিষ্যতে যেন ‘একনায়কতান্ত্রিক’ ক্ষমতার দৃশ্যপট সৃষ্টি না হয় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলে হানাহানি যেন না হয় সেজন্য সংবিধান সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য জাতীয় নির্বাচনকেই গণপরিষদ নির্বাচনের রূপ দেওয়ার কথা বলছেন তারা।

আমরা দুই মাসের মধ্যে জেলা-উপজেলায় কমিটি করবো। আমরা বারবার রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে আসছি। নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কমিশন যে সুপারিশ করেছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।- এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন

Advertisement

সেক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রথমে গণপরিষদ গঠন করবেন, এরপর সংবিধান পরিবর্তন করে আইনসভার ‘ফরম্যাটে’ চলে যাবেন। পরে নিয়মিত সংসদের কাজ করবেন। এতে সংবিধান পরিবর্তনের সুযোগ সহজেই থাকবে না।

আরও পড়ুন একবার প্রধানমন্ত্রী হলে পরে রাষ্ট্রপতি নয়, ঐকমত্য কমিশনকে এনসিপি ইসির সংস্কার ছাড়া নিবন্ধনের আবেদন করবে না এনসিপি দলীয় নেতাদের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে এনসিপিতে ‘অস্বস্তি’

গত ১০ মার্চ নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয় কমিশন। তবে গত ১৭ এপ্রিল নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা কমপক্ষে ৯০ দিন (তিন মাস) বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ওই দিন দুপুরে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিবকে দেওয়া এক লিখিত আবেদনে এ অনুরোধ জানায় দলটি। এরপর গত ২০ এপ্রিল ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ নতুন দল নিবন্ধনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ানো হয়েছে বলে জানান।

গঠিত হবে যুব উইং ও শ্রমিক শাখা

দুই মাসের মধ্যেই কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চায় দলটি। পাশাপাশি এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এনসিপির যুব উইংয়ের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে গত ২৯ মার্চ যুব উইং এবং ২৩ মার্চ দলটির শ্রমিক শাখা গঠনের লক্ষ্যে উপ-কমিটি গঠন করে দলটি। এই দুই উইংয়ের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজও প্রায় শেষ।

এনসিপি সূত্র জানায়, যুব উইংয়ের প্রধান কাজ হবে দেশের শিক্ষিত যুব সমাজকে দলে ভেড়ানো। বিশেষ করে যারা অধিকার সচেতন এবং দলের কার্যক্রম বাড়াতে সহায়ক হবে। শ্রমিকদের অধিকার, ন্যায্য পাওনা, বেতন, সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে শ্রমিক উইং। এছাড়া চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, কৃষিবিদদের সমন্বয়ে পেশাজীবী উইং গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারুণ্যনির্ভর নতুন এ দলটি।

Advertisement

আমাদের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অফিস নেওয়ার কার্যক্রম চলমান। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য যেসব শর্ত থাকা দরকার সেগুলো আমরা অচিরেই পূরণ করবো। আমাদের সক্ষমতা আছে।- এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেলের তথ্য বলছে, গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরুর পর থেকে সারাদেশে উপজেলা ও থানা পর্যায়ে ৪৫৫টি কমিটি করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। যার মধ্যে ১৬০টি থানা, ২৮০টি উপজেলা এবং ১৫টি ওয়ার্ড কমিটি করা হয়। প্রকৌশলী, ডাক্তার, ব্যাংকার, মেরিন প্রকৌশল, শিক্ষক, কৃষিবিদ, আইনজীবী এবং প্রবাসীদের নিয়ে অন্তত ১২টি উইং গঠন করা হয়। এছাড়া সারাদেশে জেলা, উপজেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। এসব কমিটিতে যারা পদ পেয়েছেন তারাই এনসিপির তৃণমূলের কমিটিতে প্রধান্য পাবেন।

তৃতীয় সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত

গত ১৯ এপ্রিল এনসিপির কার্যালয়ে দলটির তৃতীয় সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৯ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ওই বৈঠকে বেশ কিছু নীতিমালা তৈরি করা হয়। দলটি সাংগঠনিক কাজের স্বার্থে ৬৪টি জেলাকে ১৯টি জোনে ভাগ করা হয়। এছাড়া কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে জেলা কমিটি সর্বনিম্ন ৩১ সদস্য থেকে সর্বোচ্চ ৫১ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে এবং উপজেলা কমিটি সর্বনিম্ন ২১ সদস্য থেকে সর্বোচ্চ ৪১ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। উভয় কমিটির আহ্বায়ক নির্ধারণে বয়স সর্বনিম্ন ৪০ বছর হতে হবে মর্মে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা দুই মাসের মধ্যে জেলা-উপজেলায় কমিটি করবো। আমরা বারবার রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে আসছি। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, আমরা চাচ্ছি সংস্কার শুরু হোক। নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কমিশন যে সুপারিশ করেছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা তো শুরু করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের নিরাপত্তার বিষয় আছে। এছাড়া বিচার বিভাগ, পুলিশসহ অন্য সেক্টরে সংস্কার করতে হবে। সংস্কার শুরু হলেই আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এগোবো।’

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অফিস নেওয়ার কার্যক্রম চলমান। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য যেসব শর্ত থাকা দরকার সেগুলো আমরা অচিরেই পূরণ করবো। আমাদের সক্ষমতা আছে।’

এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দুই মাসের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন সংস্কারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব। সেজন্য সব পক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।’

এনএস/এএসএ/এএসএম