ক্যাম্পাস

‘উপযুক্ত নীতিমালার অভাবে পোষা প্রাণীর চিকিৎসার অগ্রগতি সীমিত’

‘উপযুক্ত নীতিমালার অভাবে পোষা প্রাণীর চিকিৎসার অগ্রগতি সীমিত’

বাংলাদেশে পোষা প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, গিনিপিগ, কবুতর, ম্যাকাও ইত্যাদি প্রাণীদের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও মমতা বেড়েছে বহুগুণ। বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন কুকুর রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩ লাখ কুকুর পোষা প্রাণী হিসেবে পালিত হয়। বিড়ালের সংখ্যা প্রায় ৪ মিলিয়নের কাছাকাছি।

Advertisement

পোষা প্রাণীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দেশে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০০টি আধুনিক পেট ক্লিনিক। যেখানে নিবন্ধিত ভেটেরিনারিয়ানরা কাজ করছেন। তবে অন্যান্য সেবা খাতের মতো এই খাতেও রয়েছে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশে পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্যসেবায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের প্রধান এবং বাংলাদেশ স্মল এনিমেল ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কে এইচ এম নাজমুল হুসাইন নাজির বলেন, এই খাতের অন্যতম সমস্যাগুলো হলো জনসচেতনতার অভাব, দক্ষ চিকিৎসকের স্বল্পতা, ভ্যাকসিন ও ওষুধের সীমিত প্রাপ্যতা এবং আধুনিক সরঞ্জামের অভাব। তদুপরি, পশু কল্যাণ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত উপযুক্ত আইন ও নীতিমালার অভাব এই খাতের অগ্রগতিকে সীমিত করে রেখেছে।

পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্যসেবায় সবার সম্মিলিত ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানরা রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পোষ্যদের গ্রুমিং করে তাদের চর্মরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করেন পরিচর্যাকারীরা। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বয়স, জাত ও স্বাস্থ্য বিবেচনায় খাদ্য পরিকল্পনা করে থাকেন। প্রশিক্ষক ও আচরণবিদরা পোষ্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সহায়ক। এছাড়া, আশ্রয়কেন্দ্র, দত্তক সংস্থা, ফার্মাসিস্ট ও পণ্য সরবরাহকারীরাও একটি কার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Advertisement

চিকিৎসাব্যবস্থায় সম্ভাবনার দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল (বিভিসি), বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন (বিভিএ) এবং বাংলাদেশ স্মল এনিমেল ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসভিএ)-এর মতো সংগঠনসমূহ নিয়মিত সেমিনার, প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালার মাধ্যমে চিকিৎসকদের দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছে। তারা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে চিকিৎসকদের পরিচিত করে তুলছে। সরকার এরইমধ্যে ভেটেরিনারি শিক্ষা, গবেষণা, ক্লিনিক আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে বিশেষায়িত পেট হাসপাতাল, ই-কমার্সভিত্তিক পণ্য সরবরাহ এবং জেনেটিক ব্রিডিং প্রোগ্রামের উন্নয়ন এই খাতের গতি বাড়াতে সহায়ক হবে।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালগুলোও পোষা প্রাণীদের স্বাস্থ্যসেবায় অংশ নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে টিকাদান, ওষুধ প্রদান, অপারেশন ও অন্যান্য রোগ নিরাময়মূলক সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই অবকাঠামো প্রাণিস্বাস্থ্য সেবাকে ঢেলে সাজাচ্ছে।

অধ্যাপক নাজির বলেন, পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজন একটি সমন্বিত, দক্ষ ও মানবিক দল, যারা সম্মিলিতভাবে একটি উন্নত, নিরাপদ ও সহানুভূতিশীল সমাজ গড়বে।

আসিফ ইকবাল/এমএন/এমএস

Advertisement