দেশজুড়ে

নিষেধাজ্ঞার সাতদিনেও চাল পাননি ২৭ হাজার জেলে

নিষেধাজ্ঞার সাতদিনেও চাল পাননি ২৭ হাজার জেলে

সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঘাটে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে শত শত নৌকা-ট্রলার। ঘাটে নেই হাঁকডাক-কোলাহল। জেলেদের মধ্যে কেউ জাল বুনছেন কেউবা ঘাটে অলস সময় পার করছেন। কেউ আবার ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত। কাজ না থাকায় অনেক জেলেই ফিরে গেছেন বাড়ি।

Advertisement

এ অবস্থায় একদিকে সংসারের চিন্তা অন্যদিকে এনজিও আর মহাজনের ঋণ। ফলে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন জেলেরা। এমন বাস্তবতায় তাদের জন্য চাল দেওয়ার কথা থাকলেও তা পৌঁছায়নি সাতদিনেও। এতে অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে জেলেদের।

প্রথমবারের মতো ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে বঙ্গোপসাগরে চলছে ৫৮ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। তবে নিষেধাজ্ঞা শুরুর সাতদিন পেরিয়ে গেলেও সরকারি বরাদ্দের চাল পায়নি বরগুনার সমুদ্রগামী ২৭ হাজার নিবন্ধিত জেলে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, এবছর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমিয়ে ৫৮ দিন করায় ও নিষেধাজ্ঞার সময় এগিয়ে আনায় বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় সময় লাগছে।

Advertisement

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবছরই সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালে নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় দুই ধাপে ৮৬ কেজি চাল বিতরণ করা হয়। সমুদ্রে মাছের উৎপাদন বাড়াতে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতো।

এবার উপকূলীয় জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে সময় সমন্বয় করে এই নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। বরগুনা জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩৭ হাজার, যাদের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলের সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার ২০০।

চাল না পেয়ে আক্ষেপ করে ষাটোর্ধ জেলে মোশাররফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তো সরকারি আইন মাইন্যা চলি। সরকার অবরোধ দেছে তাই মোরা সাগরে যাই না। এহন যদি সরকার আমাগো খাওয়াইয়া না রাহে তাইলে মোরা কি খামু! কই যামু!’

সাগরে ডাকাত আতঙ্কের পাশাপাশি অবরোধের আগে মাছ না পেয়ে ফিরে আসা জেলে শহিদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, এবছর সাগরে মাছ তেমন পাইনি। এরমধ্যে আবার সাগরে ডাকাতের আতঙ্কে ঠিকভাবে মাছ ধরতে পারিনি। এরপর অবরোধ শুরু হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের চাল এখনো পাইনি। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই যাতে দ্রুত চাল দেওয়া হয়।

Advertisement

চাল না পাওয়ায় পারিবারিক কলহ বাড়ছে দাবি করে বরগুনার পোটকাখালী এলাকার মোশারেফ খান জাগো নিউজকে বলেন, আজ অবরোধের সাতদিন হওয়ার পরও চাল পাইনি। আমাদের কিস্তি আছে তাই আমার মতো জেলেদের এই সময়ে বাড়িতে স্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। আমার ইনকাম নাই দেখে স্ত্রী চলে গেছে। আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ।

চাল প্রকৃত জেলেরা পান না অভিযোগ করে জহিরুল নামের এক জেলে জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের একবার চাল দিলে দ্বিতীয়বার আর দেয় না। জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশে আমাদের জন্য বরাদ্দের চাল পায় রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে অন্যান্য পেশার মানুষ। অথচ সাগরে মাছ ধরি আমরা।

প্রতিবারের মতো এবারও চাল পাননি বলে ফিরোজ আকন বলেন, এবছর ভারতের সঙ্গে মিলে অবরোধ দেওয়ায় আমরা খুশি হলেও চাল পাইনি। অথচ দুই মাস আমাদের হাতে কোনো কাজ থাকবে না। এসময় পরিবার নিয়ে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তাই তো অনেক জেলে গোপনে সাগরে চলে যান।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়নে আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। এ বছরের বরাদ্দ এখনো আমরা পাইনি। তবে যেহেতু এবার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে সে হারেই খুব দ্রুত জেলেদের মাঝে তাদের প্রণোদনার চাল পৌঁছে দেবো।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, মৎসসম্পদ বৃদ্ধির জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সাগরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর আগে জাটকা সংরক্ষণ নিষেধাজ্ঞার প্রণোদনার চাল বিতরণ হয়ে গেছে। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় পুনর্নির্ধারণ হওয়ায় সহায়তার চাল বরাদ্দ পেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ভিজিএফের চাল আসামাত্রই জেলেদের মাঝে দ্রুত বিতরণ করা হবে।

নুরুল আহাদ অনিক/জেডএইচ/জেআইএম