দেশজুড়ে

ঘরের বাইরে বের হলেই যেন আগুনের হল্কা লাগছে গায়ে

ঘরের বাইরে বের হলেই যেন আগুনের হল্কা লাগছে গায়ে

বৈশাখের খরতাপে পুড়ছে যশোরের প্রাণ-প্রকৃতি। অব্যাহত তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত দু’দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার আগুনে পুড়ছে যশোর। এর আগে চৈত্রের শেষভাগেও বেশ কয়েকদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করেছে যশোরে।

Advertisement

বুধবার (২৩ এপ্রিল) যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল যশোরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, কয়েকদিন ধরেই যশোরে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থা আরও কয়েকদিন বিরাজ করতে পারে।

যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার বিকেল ৩টার পর এই জেলায় সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরেই বৈশাখের এই খরতাপে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

Advertisement

এর আগে চৈত্রের শেষভাগেও খরতাপে একাধিক দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এর মধ্যে ২৮ মার্চ তাপমাত্রার পারদ চড়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ওই সময় টানা তিনদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে রেকর্ড করা হয়।

এদিকে যশোরে মাঝারি তাপপ্রবাহে গোটা প্রাণ-প্রকৃতি দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দুপুরের দিকে রাস্তা-ঘাট, ফসলের ক্ষেতে মরুর উত্তাপ বিরাজ করছে। ঘরের বাইরে বের হলেই যেন আগুনের হল্কা গায়ে লাগছে। শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সূর্যের তাপ এতই বেশি যে, খোলা আকাশের নিচে হাঁটলেও গরম বাতাসে শরীর যেন ঝলসে যাচ্ছে। যাত্রাপথে ছাতা মাথায় দিয়ে তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই। স্বস্তি পেতে শ্রমজীবী মানুষ রাস্তার পাশে বিশ্রাম নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ হাতে মুখে পানি দিয়ে ঠান্ডা হওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউবা শরবত, আখের রস, স্যালাইন পানিতে শরীর শীতল করার চেষ্টা করছেন।

যশোর শহরের লালদীঘি পাড়ে আখের রস বিক্রি করেন কালাম হোসেন। তিনি জানান, প্রচণ্ড গরমে অনেক মানুষ আসছে আখের রস খেতে। কিন্তু রস বিক্রি করতেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। ছায়া খুঁজে দাঁড়িয়ে রস বিক্রি করতে হচ্ছে।

যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক জিহাদ আলী বলেন, প্রচণ্ড গরমে গায়ে যেন আগুনের ধাক্কা লাগছে। একটু রিকশা চালালেই ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে। গরমে মাথা ঘুরে উঠছে।

Advertisement

দড়াটানা এলাকায় রিকশাচালক হোসেন মিয়া বলেন, গরমে রিকশা চালালে গায়ে যেন আগুনের ছ্যাঁকা লাগছে। তারপরও রিকশা চালাতে হচ্ছে। কিন্তু ঠিকমতো ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। গরমে মানুষ বাইরে কম আসছে।

চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বিপাকে পড়া শ্রমজীবী মানুষ তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে মাথায় টুপি অথবা গামছা পরে চলাচল করছেন। কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা ক্লান্ত দেহে ছায়ায় বিশ্রাম করছেন। গরমের হাত থেকে শরীর শীতল করে জুড়িয়ে নিতে শহর থেকে কিশোর-যুবকরা দল বেঁধে ছুটছেন গ্রামাঞ্চলে নলকূপগুলোতে গোসল করতে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত বছরের ৩০ জুন যশোরে ব্যারোমিটারের পারদ চড়েছিল ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৭২ সালে ১৮ মে। সেদিন রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মিলন রহমান/এফএ/এএসএম