‘আরে জিম্বাবুয়ে কি খেলবে? শেষ ১০ টেস্টে তো একটিও জেতেনি। ঘরে ও বাইরে আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের কাছেও হেরেছে। বাংলাদেশের কাছে তো পাত্তাই পাবে না।’
Advertisement
সিলেট টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের সমর্থকদের বড় অংশের ধারণা ছিল এমনি। এমনকি বিসিবি, বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টও হয়ত জিম্বাবুয়েকে অনেকটা হালকাভাবে নিয়ে থাকবে। জিম্বাবুয়েকে নিয়ে কোনো হোম ওয়ার্ক বহুদূরে, ন্যুনতম প্রস্তুতিও ছিল না।
মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, বাংলাদেশ একটু বেশিই জিম্বাবুয়েকে ছোট করে দেখেছে এবং দলটির শক্তি ও সামর্থ্যের প্রতি অনেক বেশি অবজ্ঞাও প্রদর্শন করেছে।
জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়কের অনুভব, খেলাটা টেস্ট। লাল বলের ক্রিকেট। সাদা বলের টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে নয়। এর ধরন, গতি-প্রকৃতি, মেজাজ, আকার, পরিধি সবই ভিন্ন। বাংলাদেশ দলের মধ্যে সে বিবেচনা ছিল না বলেই চলে। থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ দল লাল বলে কয়েকটি তিনদিনের ম্যাচ খেলতো; কিন্তু তার কিছুই হয়নি। উল্টো সাদা বল খেলে কেটেছে সময়।
Advertisement
দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটার আশরাফুলের মূল্যায়ন, এই সিরিজে জিম্বাবুয়েকে অনেক বেশি দূর্বল, কমজোরি দল ভেবে বাংলাদেশ সেভাবে প্রস্তুতি নেয়নি। আশরাফুল বলে ওঠেন, ‘বাংলাদেশের প্রস্তুতি দেখে মনেই হয়নি জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট সিরিজ নিয়ে কোন চিন্তা আছে। থাকলে শেষ ৬-৭ মাস শুধু সাদা বলে ক্রিকেট চর্চা হতো না।’ আজ বুধবার সন্ধ্যার পর জাগো নিউজের সাথে আলাপে আশরাফুল বলেন, ‘বাংলাদেশের এ সিরিজ নিয়ে কোন চিন্তা ও পরিকল্পনাই ছিল না। জিম্বাবুয়েকে আমরা অনেটা অবজ্ঞাই করেছি। সিরিজটা নিয়ে পরিকল্পনা থাকলে টেস্ট সিরিজের আগে ক্রিকেটারদের লাল বলে হাতে গোনা কয়েকদিনের অনুশীলনের আগে অন্তত কয়েকটি তিনদিনের ম্যাচ খেলানো হতো।’
আশরাফুল আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রস্তুতি ঘাটতি ও কমতি থাকলেও জিম্বাবুয়ে ঠিকই প্রস্তুতি নিয়েছে। জানুয়ারিতে আফগানিস্তান আর ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ডের সাথে দুটি টেস্ট খেলেছে জিম্বাবুইয়ানরা। বুলাওয়েতে হওয়া দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৭২ ও ৬৩ রানে হেরেছে জিম্বাবুয়ে। গত বছর ডিসেম্বরে আফগানিস্তান আর জুলাইতে আয়ারল্যান্ড গিয়ে টেস্ট খেলেছে জিম্বাবুয়ে।’
আশরাফুল যোগ করেন, ‘সেখানে আমরা জিম্বাবুয়েকে খুব হালকা ভাবে নিয়েছি। আমাদের ভক্ত, সমর্থক, ক্রিকেট বোর্ড ও টিম ম্যানেজমেন্ট সবার ধারণা ছিল, জিম্বাবুয়ে খুব দূর্বল। তাদের শক্তি-সামর্থ্য খুব কম। তারা আমাদের সাথে টেস্টে পেরে উঠবে না। জিম্বাবুয়েকে খাট ও হালকা করে দেখার কারণেই আমরা টেস্ট খেলার আগে লাল বলে তেমন কোনো প্রস্তুতিই নেইনি।’
‘আমরা টানা ৬-৭ মাস ধরে সাদা বলেই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। কাটাচ্ছি। এর বড় সময় আমরা টি-টোয়েন্টি খেলার মধ্যেই ছিলাম। প্রথমে এনসিএল টি-টোয়েন্টি খেললাম। তারপর বিপিএল-এ ব্যস্ত ছিল সবাই। তারপর আবার এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ নিয়ে সবাই ব্যস্ত। সাদা বলে খেলতে খেলতে লাল বলের চর্চাই ছিল কম। আর দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের সাথেই যোগাযোগ ছিল কম।’
Advertisement
‘অথচ জিম্বাবুয়ে দেখেন ঘরের মাঠে আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড এমনকি পাকিস্তানের বিপক্ষেও টেস্ট খেলেছে। ফল যাই হোক, লাল বলে দীর্ঘ পরিসরের খেলায় তারা সম্পৃক্ত ছিল। তারা আসলে টেস্টের মধ্যেই ছিল। আমরা যা ছিলাম না। তাই টেস্টের প্রস্তুতি হিসেব করলে জিম্বাবুয়ে আমাদের চেয়ে বেটার প্রিপেয়ার্ড দল। যাদের পেস বোলিং ইউনিটটা দারুণ। তাদের বোলাররা লং স্পেলে জোরের ওপর খুব ভাল জায়গায় বল ফেলার কৌশল ও সামর্থ্যটা আত্তস্থ করেছে তারা জেনে গেছে কোন উইকেটে কোন লাইন ও লেন্থে বল করলে সফল হওয়া যাবে। আমি জানতাম, ওদের বোলিং ইউনিটটা খুব ভাল। ফাস্ট বোলারদের প্রায় সবাই সাড়ে ৬ ফুট লম্বা। তারা জানে কোন লেন্থে বল ফেললে ব্যাটারদের অস্ততিতে ফেলা যাবে। সিলেটে বাউন্স ও পেস বেশি ছিল। মুজারাবানিরা ঠিকই সঠিক লেন্থ পিক করে আমাদের ব্যাটারদের সমস্যার উদ্রেক ঘটিয়েছে।’
এআরবি/আইএইচএস