কানাডায় বসবাসরত হাজারও অভিবাসী, বিশেষ করে ভারতীয় কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) হারাচ্ছেন। নতুন করে কাগজপত্র নবায়নের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, নিয়মের পরিবর্তন এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত অনুমোদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় তারা বৈধ মর্যাদা ধরে রাখতে পারছেন না। ফলে কর দেওয়া সত্ত্বেও তারা না পারছেন কাজ করতে, না পাচ্ছেন স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা।
Advertisement
এমনই একজন অভিবাসী দেবী আচার্য। ২০২২ সালের অক্টোবরে স্বামী ও পাঁচ বছরের ছেলে নবদেবকে নিয়ে তিনি কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রিন্স রুপার্টে যান। হাইলাইনার হোটেলে হাউজকিপিংয়ের কাজ করতেন তিনি। নতুন জীবন শুরু করতে সম্প্রতি স্বামীর সঙ্গে একটি বাড়িও কিনেছেন। কিন্তু, কাজের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে দেবী আর চাকরি করতে পারছেন না।
আরও পড়ুন>>
ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে কানাডায় মার্কিন পণ্য বয়কটের হিড়িক ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ বাতিল করছেন কানাডীয়রা ইলন মাস্কের কানাডিয়ান নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে আড়াই লাখের বেশি সইআরও হৃদয়বিদারক ব্যাপার হলো—চলতি বছরের মার্চ মাসে গর্ভপাত হয় তার। কারণ, কাজ হারানোর পর স্বাস্থ্যবিমা না থাকায় হাসপাতালে যেতে পারেননি এ নারী। ‘যদি সময়মতো চিকিৎসা পেতাম, হয়তো সন্তানকে বাঁচানো যেতো।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন দেবী আচার্য।
Advertisement
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ও তার স্বামী নতুন ‘লেবার মার্কেট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট’র (এলএমআইএ) জন্য আবেদন করেন। এখন পর্যন্ত তার কোনো উত্তর আসেনি। আবেদন চলমান থাকলেও কাজের অনুমতি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। ফলে তারা আইনি ভাবে কানাডায় থাকলেও কাজ করতে পারছেন না। এমনকি তাদের ছেলে নবদেব স্কুলেও যেতে পারছে না।
দেবীর কথায়, দু’বছর আগে আমরা ভেবেছিলাম কানাডা হবে আমাদের ঘর। এখন সেই স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে।
ব্যাকলগের বোঝায় বাড়ছে অনিশ্চয়তাসম্প্রতি এলএমআইএ অনুমোদনের সময় আগের চেয়ে তিনগুণ বেড়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে এই কাজে সময় নিতো ৫৮ কার্যদিবস, ২০২৫ সালের মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ১৬৫ কার্যদিবসে। সার্ভিস কানাডা জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত তারা এখনো ২০২৪ সালের এপ্রিলে দাখিল হওয়া আবেদনগুলো প্রসেস করছে।
অভিবাসন পরামর্শদাতা কানওয়ার সিরাহ জানান, আমরা এই প্রথম দেখছি আবেদন প্রক্রিয়ায় এক বছরের বেশি বিলম্ব হচ্ছে। অনেকে মর্যাদা হারিয়ে এখন অনিয়মিত উপায়ে কাজ করছেন বা প্রতারিত হচ্ছেন—যেমন, ভিত্তিহীন আশ্রয় আবেদনের পরামর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে অনেককেই।
Advertisement
অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কানাডার লিবারেল সরকার এখন বলছে, তারা সীমিত সংখ্যক ক্ষেত্রে এই সুযোগ দেবে। কেবল নির্দিষ্ট খাতে কাজ করা অভিবাসীরাই এই সুযোগ পেতে পারেন। একই সঙ্গে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি আগামী ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনের আগে অভিবাসন কমানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কানাডা সরকারের তথ্য অনুযায়ী, যেসব অভিবাসী কাজের অনুমতি নবায়নের জন্য আবেদন করেন, তারা যদি ৬০ দিনের মধ্যে এলএমআইএ পান, তাহলে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু যারা বিলম্বের কারণে মর্যাদা হারাচ্ছেন, তাদের জন্য সরকারের নির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
নিয়মের পরিবর্তন ও আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র: এনডিটিভিকেএএ/