সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিশ্ববাজারে সোনার দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। বাজারে অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করে সোনা কিনে রাখছেন বলেই এটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
Advertisement
আর্থিক সংকট বা অস্থির সময়ে প্রথাগতভাবেই এই মূল্যবান ধাতুটিকে নির্ভরযোগ্য ও দৃশ্যমান সম্পদ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এটি কি সত্যিই কোনো নিরাপদ বিনিয়োগ?
গত এক শতাব্দীর মধ্যে বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতিতে অন্যতম বড় পরিবর্তন ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, যার প্রতিক্রিয়ায় গত সপ্তাহে সোনার দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে তিন হাজার ১৬৭ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
অস্থির সময়ে প্রায়ই স্বর্ণের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। যেমন সম্প্রতি ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগের কারণে চলতি বছর বারবার স্বর্ণের রেকর্ড ভেঙেছে। অর্থবাজার ধসে পড়লে হঠাৎ করে ‘সোনা কেনার হিড়িক’ শুরু হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা স্বর্ণ কেনার চেষ্টা করেন।
Advertisement
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, তা হলে সোনা কিনছে কারা?
বেলফাস্টের কুইন্স ইউনিভার্সিটির অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ড. ফিলিপ ফ্লায়ার্স বলেন, হয় সরকার, ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী অথবা খুচরো বিনিয়োগকারী সোনা কিনছেন। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে শেয়ারের মতো ইক্যুইটি ছেড়ে দিচ্ছে এবং সোনার দিকে ঝুঁকছে। আর এতে সোনার দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
প্রথাগতভাবে আর্থিক অনিশ্চয়তার সময়ে স্বর্ণকে ‘সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ধাতু’ হিসেবে ধরা হয়।
২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে হঠাৎ করেই সোনার দাম অনেক বেড়ে যায়। তবে, আর্থিক বাজারের অনিশ্চয়তা সোনাকেও প্রভাবিত করতে পারে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু হলে স্বর্ণের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। তবে মার্চ মাসের মধ্যেই সেই দাম আবার কমতে শুরু করে।
Advertisement
এটি নিরাপদ বিনিয়োগ, তার মানে এই নয় যে এতে কোনো ঝুঁকি নেই, বলেন ড. ফ্লায়ার্স।
তবুও আর্থিক অনিশ্চয়তার সময়ে বিনিয়োগের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে এখনও সোনা বিবেচিত হয়। আর তা কেবল এর মূল্যের জন্য নয়, বরং ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অত্যন্ত মূল্যবান হিসেবে গণ্য হওয়ায় এটি সহজে বিনিময়যোগ্যও।
প্রাচীন মিশরের তুতেনখামুনের সোনার মুখোশ থেকে শুরু করে ঘানার আসান্তে জাতির গোল্ডেন স্টুল এবং ভারতের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের সোনার সিংহাসন পর্যন্ত-ঐতিহাসিকভাবে সোনা ধর্মীয় ও প্রতীকী গুরুত্ব বহন করে এসেছে।
তাই এতে আশ্চর্যান্বিত হওয়ার কিছু নেই যে বহু মানুষ তাদের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সোনাকেই একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে দেখে।
বাসায় থাকা সোনার গয়না বা এর তৈরি অন্যান্য সামগ্রীর মূল্য সাধারণত বৈশ্বিক অর্থবাজারের ওঠানামায় তেমন প্রভাবিত হয় না।
তবে ধাতুটিতে বড় পরিমাণে বিনিয়োগ করা হলে তা বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে সোনার দাম বৃদ্ধির পেছনে ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অনেক বেশি করে সোনা কেনার’ কারণকেই দায়ী বলে সন্দেহ করেন ড. ফ্লায়ার্স।
অনিশ্চয়তার সময়ে রিজার্ভ শক্তিশালী করতে তারা শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে সরে এসে প্রচুর পরিমাণে সোনা কেনে। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, মূল্যবান এই ধাতুতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ড. ফ্লায়ার্স বলেন, সোনার দাম বাড়বে এই আশায় বিনিয়োগ করাটা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল। কারণ একবার বাজারে স্বস্তি চলে এলে ও সরকারগুলো স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে এলে, মানুষ আবার স্বর্ণ ছেড়ে দেবে। তাই স্বর্ণে বিনিয়োগ করলে সেটা দীর্ঘমেয়াদে করতে হয়।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ