লাইফস্টাইল

শৈশবেই রোপণ হোক মার্জিত আচরণের বীজ

শৈশবেই রোপণ হোক মার্জিত আচরণের বীজ

জান্নাত শ্রাবণী

Advertisement

সাহায্য করা, ধন্যবাদ বা দুঃখিত বলার মধ্য দিয়েই ভদ্রতার শুরু; আমরা এমনটাই জানি। তবে সত্যিকার অর্থে ভদ্রতা শুধুমাত্র কয়েকটি শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভদ্রতা হচ্ছে মূল্যবোধ, সহমর্মিতা এবং অন্যের প্রতি সম্মানবোধের বহিঃপ্রকাশ। জন্মগতভাবে কারও মধ্যে এই ভদ্রতা থাকে না। এমনকি একদিনে কাউকে ভদ্রতা শেখানো যায় না। এজন্য শৈশব থেকেই শিশুদের এমন কিছু শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন যা তাকে গড়ে ‍তুলবে একজন সংবেদনশীল, সচেতন ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে। চলুন জেনে নেই প্রতিটি বাবা-মায়ের কেমন শিক্ষা দেওয়া উচিত শিশুদের।

ভদ্রতার শিক্ষা শুরু হোক ঘর থেকেই

ভদ্রতা শুধু বাইরের মানুষের জন্য নয়। ঘরেও বাবা-মা, ভাই-বোন, এমনকি পোষা প্রাণীর প্রতি সম্মান থাকা জরুরি।

যেমন-কাউকে না বলে কারও ঘরে ঢুকে পড়া, অনুমতি ছাড়া কারও জিনিসপত্র না নেওয়া। এর মধ্য দিয়ে শিশু শেখে বাউন্ডারির গুরুত্ব এবং অন্যের প্রতি কীভাবে সম্মান প্রকাশ করতে হয়।

Advertisement

মনোযোগ দিয়ে শোনা

শুধু চুপ করে শোনা নয়, মন দিয়ে শোনার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশুকে বোঝাতে হবে যে যখন কেউ কথা বলছে, তখন নিজের উত্তর কী হবে সেটা না ভেবে তার কথায় মনোযোগ দিতে হয়। এই অভ্যাস থেকে গড়ে ওঠে সহানুভূতিশীল সম্পর্ক, ভালো বন্ধুতা এবং মননশীল ব্যক্তিত্ব।

আরও পড়ুন:

প্রকৃতির ছন্দে গড়ি সুস্থ জীবন নোটিফিকেশনের ভিড়ে নিঃশব্দে ডুবে যায় মনের শান্তি চাহিদার চাপে নয়, বুদ্ধির ব্যবস্থায় বাঁচুন সবকিছু তৎক্ষণাৎ নয়

শিশুদের শেখাতে হবে যে সব কিছু চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় না। কারো কথা বলার সময় বাধা না দেওয়া, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বা প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য ধৈর্য রাখা-এই আচরণগুলো শিশুদের আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। এতে তারা শেখে কিভাবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং অন্যের জায়গা বা সময়কে সম্মান জানাতে হয়। এটি ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সাহায্য করে।

প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শেখা

ভদ্রতা মানে সব কিছুর জন্য ‘হ্যাঁ’ বলা নয়। শিশুকে শেখাতে হবে কিভাবে নম্রভাবে ‘না’ বলা যায়, আবার কিভাবে অন্যের ‘না’ কে সম্মান করা যায়। এই আচরণ থেকেই জন্ম নেয় পারস্পরিক সম্মান, সম্মতির ধারণা এবং নিজের সীমা নির্ধারণ করার বোধ।

Advertisement

ভুল হলে তা মানতে জানা

শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি জীবনের ভুলগুলো বুঝতে শেখাতে হবে। যেমন- কোনো কিছু নোংরা করলে সেটা পরিষ্কার করা, ভুল করলে ‘দুঃখিত’ বলা বা কারো মন খারাপ করলে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করা। এই অভ্যাস শিশুকে গড়ে তোলে একজন দায়িত্বশীল এবং আত্মজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসেবে।

সাহায্য করার অভ্যাস গড়ে তোলা

কেউ সাহায্য চাওয়ার আগেই এগিয়ে আসার বিষয়ে শিশুদের বুঝানো। যেমন- বড়দের ব্যাগ ধরতে সাহায্য করা, কাউকে চেয়ারে বসতে দেওয়া, কাঁদছে এমন কাউকে সান্ত্বনা দেওয়া-এইসব আচরণ শিশুকে করে তোলে সহানুভূতিশীল ও সচেতন মানুষ।

ভিন্নতাকে সম্মান করা

‘ভদ্র হও’ কথাটা প্রায়ই শিশুরা শোনে, কিন্তু কজনই বা শেখে ভিন্নতা মেনে নিতে? শিশুকে শেখাতে হবে, কেউ দেখতে আলাদা, কথা বলায় ভিন্ন, ধর্ম বা সংস্কৃতিতে ভিন্ন হলেই তাকে ছোট করা যায় না। এই শিক্ষা থেকেই তৈরি হয় সহনশীলতা, সৌহার্দ্য এবং মানবিকতা। ভবিষ্যতে এই শিশুরাই হবে বৈচিত্র্য-পছন্দকারী, সহানুভূতিশীল মানুষ, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।

জেএস/এমএস