আন্তর্জাতিক

বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে কেন?

বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে কেন?

গত কয়েক মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। বাজারে অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করে সোনা কেনায় ঝোঁকার কারণেই এটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর্থিক সংকট বা অস্থির সময়ে প্রথাগতভাবেই এই মূল্যবান ধাতুকে নির্ভরযোগ্য ও দৃশ্যমান সম্পদ হিসেবে দেখা হয়। 

Advertisement

সোনা কি সত্যিই নিরাপদ বিনিয়োগ?গত এক শতাব্দীর মধ্যে বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতিতে অন্যতম বড় পরিবর্তন ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ। এর প্রতিক্রিয়ায় সর্বশেষ প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়ে তিন হাজার ৩৫৭ দশমিক ৪০ ডলারে দাঁড়িয়েছে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগের কারণে চলতি বছর বারবার সোনার দামে রেকর্ড ভেঙেছে। অস্থির সময়ে প্রায়ই সোনার দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। অর্থবাজার ধসে পড়লে হঠাৎ করে সোনা কেনার হিড়িক শুরু হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা স্বর্ণ কেনার চেষ্টা করেন।

সোনা কিনছে কারা?বেলফাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ড. ফিলিপ ফ্লায়ার্স বলেন, হয় সরকার, ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী অথবা খুচরা বিনিয়োগকারীরা সোনা কিনছেন। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে শেয়ারের মতো ইক্যুইটি ছেড়ে দিচ্ছে এবং সোনার দিকে ঝুঁকছে। এতে সোনার দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

Advertisement

প্রথাগতভাবে আর্থিক অনিশ্চয়তার সময়ে সোনাকে ‌‌‘সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ধাতু’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে হঠাৎ করেই সোনার দাম অনেক বেড়ে যায়। তবে আর্থিক বাজারের অনিশ্চয়তা স্বর্ণকেও প্রভাবিত করতে পারে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু হলে স্বর্ণের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। তবে মার্চ মাসের মধ্যেই সেই দাম আবার কমতে শুরু করে। ড. ফিলিপ ফ্লায়ার্স বলেন, এটি নিরাপদ বিনিয়োগ, তার মানে এই নয় যে এতে কোনো ঝুঁকি নেই।

তবুও আর্থিক অনিশ্চয়তার সময়ে বিনিয়োগের জন্য সোনাকেই একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে এখনও বিবেচনা করা হয়। এটা কেবল সোনার মূল্যের জন্য নয় বরং ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অত্যন্ত মূল্যবান হিসেবে গণ্য হওয়ায় এটি সহজে বিনিময়যোগ্যও।

প্রাচীন মিশরের তুতেনখামুনের সোনার মুখোশ থেকে শুরু করে ঘানার আসান্তে জাতির গোল্ডেন স্টুল এবং ভারতের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের সোনার সিংহাসন পর্যন্ত—ঐতিহাসিকভাবে ধর্মীয় ও প্রতীকী গুরুত্ব বহন করে এসেছে এই মূল্যবান ধাতু।

Advertisement

তাই বহু মানুষ তাদের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সোনাকে একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে দেখে। এতে আসলে আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নেই।

বাসায় থাকা সোনার গয়না বা এর তৈরি অন্যান্য সামগ্রীর মূল্য সাধারণত বৈশ্বিক অর্থবাজারের ওঠানামায় তেমন প্রভাবিত হয় না। তবে ধাতুটিতে বড় পরিমাণে বিনিয়োগ করা হলে তা বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে সোনার দাম বৃদ্ধির পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অনেক বেশি করে সোনা কেনার কারণকেই দায়ী বলে সন্দেহ করেন ড. ফ্লায়ার্স। অনিশ্চয়তার সময়ে রিজার্ভ শক্তিশালী করতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে সরে এসে প্রচুর পরিমাণে সোনা কেনে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে মূল্যবান এই ধাতুতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে সোনার দাম আরও বাড়লো গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত, প্রাণ হারিয়েছে আরও ৫২ জন গাজা দখলের বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করলো জার্মানি

ড. ফ্লায়ার্স সোনার দাম বাড়বে এই আশায় বিনিয়োগ করাটা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল। কারণ একবার বাজারে স্বস্তি চলে এলে এবং বিভিন্ন দেশের সরকার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে এলে, মানুষ আবার সোনা কেনা কমিয়ে দেবে। তিনি বলেন, আমি বলব সোনা বিনিয়োগ করলে সেটা দীর্ঘমেয়াদে করতে হয়।

টিটিএন