লাইফস্টাইল

দিনের ঘুম কি উপকারী?

দিনের ঘুম কি উপকারী?

দুপুরের খাবারের পর, রৌদ্রজ্জ্বল শান্ত সময়টায় অদ্ভুত এক অলসতা ভর করে শরীরে। মস্তিষ্ক তখন পাওয়ার-সেভ মোডে চলে যায়। সে সময় একটি ছোট্ট ঘুমের চেয়ে আকর্ষণীয় আর কিছুই মনে হয় না। একে আমরা বাঙালিরা আদর করে ‘ভাতঘুম’ ডাকি। কিন্তু দিনের বেলা ঘুমানো কি আসলে ভালো? উত্তর একই সঙ্গে হ্যাঁ এবং না।

Advertisement

এটি নির্ভর করে কীভাবে, কখন এবং কতক্ষণ আপনি ঘুমান তার উপর। সঠিকভাবে ঘুমালে এটি মস্তিষ্ককে একটি মিনি ভ্যাকেশনের মতো রিচার্জ করতে পারে। আর ভুলভাবে ঘুমালে আপনি ঝিমুনি ভাব, কনফিউশন এবং রাতের ঘুম নষ্ট হওয়ার সমস্যায় ভুগতে পারেন। তাহলে জেনে দিনের বেলায় কেমন ঘুম আপনার উপকারে আসবে-

১. ছোট্ট ঘুমপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আদর্শ ভাতঘুম বা ন্যাপের সময় হলো ২০ থেকে ৩০ মিনিট। এর বেশি সময় ঘুমালে গভীর ঘুমের স্তরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যার ফলে বাকী দিনটি ঝিমুনির মধ্যে দিয়ে কাটতে পারে। তবে ছোট্ট একটি ঘুম আপনার ফোকাস বাড়াবে, মেজাজ উন্নত করতে এবং দিনের বাকি সময়ের জন্য প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে দিতে পারে। একে রাতের ঘুমের বিকল্প মনে না করে মুড রিসেটের একটি দ্রুত কৌশল হিসেবে ভাবুন। অ্যালার্ম সেট করুন, একটি শান্ত জায়গা খুঁজে নিন এবং পুরোপুরি ঘুমিয়ে না গিয়ে একটি মিনি রিচার্জ উপভোগ করুন।

২. দিনের শেষের দিকে ঘুমাবেন নাটাইমিংই সবকিছু। বিকেল ৪টার পর ঘুমালে তা আপনার প্রাকৃতিক ঘুমের সাইকেল নষ্ট করতে পারে এবং রাতে ঘুমাতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। যাদের আগে থেকেই ঘুমের সমস্যা বা ইনসোমনিয়া আছে, তাদের এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। ঘুমানোর সবচেয়ে ভালো সময় হলো দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে, যখন আপনি স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা ক্লান্ত। এভাবে আপনি রাতের ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটিয়েই উপকার পাবেন। ক্লান্ত শরীরে দেরিতে ঘুমাতে তাৎক্ষণিকভাবে ভালো লাগলেও পরে এটি নির্ঘুম ও অস্থির রাতের কারণ হতে পারে।

Advertisement

৩. শুধুমাত্র ঘুমের ঘাটতি থাকলে ঘুমানগত রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি? একটি ছোট্ট ঘুম এই ঘাটতি কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি হারানো ঘুমের পুরো সময়টা ফিরিয়ে দেবে না, তবে এটি আপনার মনোযোগ বাড়াতে, বিরক্তি কমাতে এবং শরীরকে কিছুটা বিশ্রাম দিতে পারে। তবে রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখুন।

৪. প্রতিদিন ঘুমাবেন নাশুধু সময় কাটানোর জন্য প্রতিদিন ঘুমাবেন না। আবার দিনে একই সময় ঘুমানো বা অতিরিক্ত ক্লান্ত বোধ করা কোন অন্তর্নিহিত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। রাতে খারাপ ঘুম, স্ট্রেস, স্লিপ অ্যাপনিয়া, লো আয়রন লেভেল, এমনকি কিছু ওষুধ আপনাকে ক্রনিক্যালি ক্লান্ত বোধ করাতে পারে। যদি পর্যাপ্ত ঘুমের পরও আপনি নিয়মিত ক্লান্ত বোধ করেন, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।

৫. খাওয়ার পরেই ঘুমাবেন নাভাতঘুম খুবই আরামদায়ক এক অনুভূতি, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ভারী, কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়ার পরপরই ঘুমানো অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা বদহজমের কারণ হতে পারে। ঘুমানোর আগে অন্তত ৩০ মিনিট শরীরকে হজমের জন্য সময় দিন। যদি খাওয়ার পরেই ঘুমাতেই হয়, সমতলে শোয়ার বদলে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নিন। লাঞ্চের পর হালকা হাঁটাচলা করে হজমে সাহায্য করুন এবং তারপর ঘুমান।

৬. পাওয়ার ন্যাপের কথা শুনেছেন?ঘুমানোর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এটি আক্ষরিক অর্থেই আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। একটি ছোট্ট ঘুম বা পাওয়ার ন্যাপ আপনার স্মৃতি, সৃজনশীলতা, লার্নিং অ্যাবিলিটি এবং প্রব্লেম-সল্ভিং দক্ষতা বাড়াতে পারে। এজন্যই অনেক সফল মানুষ পাওয়ার ন্যাপের বড় ফ্যান। তাই আপনার সামনে যদি ব্যস্ত দিন বা কোনো ক্রিয়েটিভ প্রজেক্ট থাকে, সেই ২০ মিনিটের ঘুম আপনার গোপন অস্ত্র হতে পারে। ঘুমানাকে মস্তিষ্কের এনার্জি ড্রিংকের মতো ভাবেতে পারেন যা হালকা, কার্যকর এবং সঠিক ডোজে নিলে অত্যন্ত ফলপ্রসূ।

Advertisement

সূত্র: টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া

এএমপি/জিকেএস