শফিক নহোর
Advertisement
আলোর মাঝে লীন ধূসর অন্ধকারনাকি অন্ধকারে আলোকরেণুর নৃত্যআলো-আঁধারের চিরন্তন লুকোচুরিবিভ্রান্তি বাড়ায়, কেউবা খোঁজে দিশা!তবুও আলো তবুও অমানিশা-কালতবুও সংগ্রাম তবুও উত্থানপতন-পর্বসৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই বলে যায়—যুযুধানেই পরিণত হয় মানবসভ্যতাআলোক-উৎস গায় অন্ধকারের গানছদ্মবেশী আলো ধাবিত হয় মধ্যযুগে!(উৎস থেকে অনাদি)
শফিক হাসানের ‘উৎস থেকে অনাদি’ কবিতাটি আলো ও অন্ধকারের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে একটি গভীর ও চিন্তাগ্রাহী আলোচনার প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করে। কবিতাটি পাঠকের মনে যে প্রশ্ন জাগায়, তা হলে—আলো ও অন্ধকারের সম্পর্ক আদতে কী? কী কারণে এই দুইয়ের লুকোচুরি আমাদের জীবনকে বিভ্রান্ত করে, আবার কী কারণে কেউ কেউ এদের মধ্যে দিশার সন্ধান করে?
কবিতার শুরুতেই ‘আলোর মাঝে লীন ধূসর অন্ধকার নাকি অন্ধকারে আলোকরেণুর নৃত্য’—এটি পাঠককে অন্তত একটি পরিপূর্ণ ছবি দেয়। এখানে দেখা যায় যে, আলো ও অন্ধকার একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কখনো হয়তো আলোর মধ্যে অন্ধকারের স্বরূপ লীন হয়, আবার কখনো অন্ধকারের মধ্যে ডানা মেলে আলো। এই চিন্তা-ভাবনা আমাদের জীবনের সম্পর্ক, যুদ্ধ ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়।
Advertisement
শফিক হাসান কবিতার মাধ্যমে মানবসভ্যতার ইতিহাসের দিকে নজর এনে দেন। যেখানে পরিবর্তন, সংগ্রাম ও উত্থান-পতনই জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ‘অমানিশা-কাল—তবুও সংগ্রাম তবুও উত্থান-পতন’ অংশটি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেয় চিরকালীন অন্ধকার কখনো স্থায়ী নয়; জীবন সব সময় নতুন দিশা খুঁজে নিয়ে এগিয়ে যায়।
কবিতার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর সুর ও ছন্দ। লেখকের ভাষাশৈলী অন্তরঙ্গ ও আবেগপ্রবণ, যা পাঠককে ভিন্ন ধারার উপলব্ধিতে নিয়ে যায়। ‘অলোক-উৎস গায় অন্ধকারের গান’ কৃত্রিম চিত্রটি একটি বিরাজমান দ্বন্দ্ব তুলে ধরে। এতে মানবজীবনের আনন্দ-বেদনা, নৈকট্য-বিরোধ, আলোর অভাব ও অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে সদস্য হয়ে ওঠে।
শফিক হাসানের ‘উৎস থেকে অনাদি’ কবিতা একটি শক্তিশালী ভাবনা ও অনুভূতির মিশেল, যা আলো ও অন্ধকারের এই চিরন্তন লুকোচুরি ও সংঘাত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এটি আমাদের বোঝাতে চায়, জীবনকে বিশ্লেষণ করতে হলে আমাদের আলো ও অন্ধকার দুটোই গ্রহণ করতে হবে এবং এর মধ্য দিয়েই আমরা নিজেদের পথ খুঁজে নিতে পারবো। পাঠকের জন্য এটি একটি ভাবনার খোরাক, যা দিশা খোঁজার উত্তরণ এবং মানব সভ্যতার একটি গভীর সত্য প্রকাশ করে।
এসইউ/
Advertisement