কৃষি ও প্রকৃতি

দিনাজপুরে লিচুর ফুল থেকে ১২০ কোটি টাকার মধু আহরণ

দিনাজপুরে লিচুর ফুল থেকে ১২০ কোটি টাকার মধু আহরণ

লিচুর রাজ্য খ্যাত দিনাজপুরে লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহের বিপ্লব ঘটেছে। রেকর্ড পরিমাণ মধু সংগ্রহ করেছে মৌচাষিরা। মৌসুমের শেষে ফিরে যাওয়ার সময় এমনই বর্ণনা দিয়েছেন স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খামারিরা। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উত্তরবঙ্গ হানি কমিউনিটির সঙ্গে খামারির সংখ্যা, বক্সের সংখ্যা, উৎপাদিত মধুর পরিমাণ ও দামের তথ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য পাওয়া গেছে। তবে দুই পক্ষই তাদের পরিসংখ্যান থেকে বলছেন, মধু সংগ্রহে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে।

Advertisement

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দিনাজপুরের লিচুর যেমন সারাদেশে কদর আছে; তেমনই লিচুর ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধুরও ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি হিসাবে, ২০১৫ সালে দিনাজপুরে লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহ হয়েছিল ২৩ হাজার ৩৬০ কেজি। ২০২৪ সালে ১০ বছরের ব্যবধানে ১৬৭ জন খামারি ৯ হাজার ১৮২টি মৌবক্স স্থাপন করে ৬৭ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন করেন। সরকারি হিসাবে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি হিসেবে যার বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবার সরকারি তথ্য সংগ্রহ চলমান। তবে প্রাথমিক ভাবে তারা জানিয়েছেন, এবার দিনাজপুরে ৩৩৫ জন খামারি ১২ হাজার মৌবক্স স্থান করেছিল।

সরকারি পরিসংখ্যানের পাশাপাশি মৌচাষিদের সংগঠন উত্তরবঙ্গ হানি কমিউনিটির পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার মৌখামারি প্রায় সোয়া লাখ মৌবক্স স্থাপন করেছিলেন। প্রত্যেক খামারি গড়ে প্রায় ৩ টন করে মধু সংগ্রহ করেছেন। যা ৩০০ টাকা কেজি হিসেবে বর্তমান বাজার মূল্য ১২০ কোটি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকারি ভাবে যে হিসাব দেওয়া হয়, তা দায়সারা মাত্র। তারা কীভাবে হিসাব করেন এবং দাম কীভাবে নির্ধারণ করেন, তা আমাদের জানা নেই।’

Advertisement

আরও পড়ুন

মানিকগঞ্জে সরিষা ও মধুতে লাভবান চাষিরা রাজবাড়ীতে বাক্সে মৌমাছি পালন, মাসে লাখ টাকা আয়ের আশা

মৌচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার লিচুর ফুল ভালো না হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের চেয়ে বেশি মৌচাষি দিনাজপুরে এসেছিলেন। প্রত্যেকে কমপক্ষে ১০০টি মৌবক্স নিয়ে এসেছেন। ১০০ মৌবক্স আছে এমন একজন চাষি কমপক্ষে ৩ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করেন।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান হয়েছে। গত বছর মধু সংগ্রহের জন্য ৪ হাজার ৯৫৪টি বক্স স্থাপন করা হয়েছিল।

উত্তরবঙ্গ হানি কমিউনিটির নির্বাহী সদস্য ও এমবিএফের মালিক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘জেলায় প্রায় দেড় হাজার মৌচাষি মৌবক্স স্থাপন করেছেন। এবার প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। দিনাজপুরে মধু উৎপাদন জনপ্রিয়তা লাভ করছে।’

Advertisement

বাগেরহাট জেলা থেকে আসা মৌখামারি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার লিচু ফুলের শেষ সময়ে ১৪ দিনে ১০০টি মৌবক্স স্থাপন করে ১ টন মধু উৎপাদন করেছি। যা রীতিমতো রেকর্ড। ৩০০ টাকা কেজি হিসেবে মধু বিক্রি হবে ৩ লাখ টাকা। আসা-যাওয়া এবং খাওয়া বাবদ সর্বোচ্চ খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। মাত্র ১৪ দিনে আয় করেছি আড়াই লাখ টাকা।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ‘মৌমাছি দিয়ে পরাগায়ন হলে গাছে ২০ ভাগ লিচু বেশি উৎপাদন হয়। বর্তমানে লিচুর ফুল থেকে সবচেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ হচ্ছে। লিচুর ফুলের মধু জমাট বাঁধে না। বিসিক ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর অনেক যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। স্থানীয়দের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে পারলে উৎপাদন বাড়বে। বিপুল আয় হবে।’

এমদাদুল হক মিলন/এসইউ/এমএস