মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছের নগরের মানুষ। ঘরমুখো এসব মানুষের উপস্থিতিতে অনেকটাই সরব হয়ে উঠেছে গাবতলী বাস টার্মিনাল।
Advertisement
গাবতলী থেকে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারলেও লোকাল বাস সার্ভিসে ভাড়া বেশি আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
তাদের অভিযোগ, সাধারণ সময়ে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ১৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও সেলফি পরিবহনের বাসে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। এতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যের ছুটতে হচ্ছে তাদের।
তবে অন্যান্য লোকাল সার্ভিসে একই দূরত্বে ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সেলফি পরিবহনে ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণ হিসেবে বিরতিহীনভাবে চলাচল ও আসন ফাঁকা রেখে ফেরত আসাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
এদিকে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)
শুক্রবার (২৮ মার্চ) গাবতলীর লোকাল বাস কাউন্টার এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া-ফেরিঘাটগামী লোকাল বাস সার্ভিস সেলফি পরিবহনে যাত্রী প্রতি ৩০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। হাঁকডাক ছেড়ে যাত্রী তুলছেন শ্রমিকরা।
ঠিক তার পাশেই অন্যান্য লোকাল বাস সার্ভিসগুলোও হাঁকডাক (পাটুরিয়া ২০০) ছেড়ে যাত্রী খুঁজছেন।
Advertisement
কুষ্টিয়ার যাত্রী মো.ফজলু। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাবেন। এরপর ফেরি পার হয়ে ওপারের লোকালে চেপে পৌঁছাবেন গন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘সবসময় ঘাট পর্যন্ত ১৫০ টাকা দিয়ে যাই। কিন্তু আজ ৩০০ টাকা করে নিচ্ছে। কী করবো, ভাড়া বেশি লাগলেও যেতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন
উপচেপড়া ভিড় নেই গাবতলীতে, কাউন্টারে টিকিট পেয়ে স্বস্তি সায়েদাবাদে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ সাভারের সড়কে আজও স্বস্তি, থেমে থেমে গাড়ির চাপদূরপাল্লার বাসে নির্ধারিত ভাড়ায় না গিয়ে লোকালে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবহনে যেতে যে টাকা খরচ হবে লোকালে ভাড়া বেশি দিলেও তার থেকে কম টাকায় আগে পৌঁছাতে পারবো।’
সেলফি পরিবহনের যাত্রী রাজবাড়িগামী মো. নাইম। অন্য লোকাল বাসে ২০০ টাকা ভাড়া হলেও ১০০ টাকা বেশি দিয়ে সেলফিতে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য লোকাল বাস সারা রাস্তায় যাত্রী নেবে। সব জায়গা থামবে। আর সেলফি বাসে যাত্রী ফুল হয়ে গেলে আর কোথাও দাঁড়াবে না। টাইমে চলে সেলফি। ঠিক টাইমে ঘাটে নামিয়ে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অন্যান্য লোকাল গাড়ি মানিকগঞ্জ পর্যন্ত যায়। তারপর আর যায় না। যদি এখন মানিকগঞ্জ গিয়ে নামিয়ে দেয়, তখন আবার ঝামেলা। তাই ১০০ টাকা বেশি হলেও সেলফিতে যাচ্ছি।’
এদিকে ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে সেলফি পরিবহনের এক টিকিট বিক্রেতা বলেন, ‘সাধারণ সময়ের থেকে সবসময়ই ঈদের সময় ভাড়া কিছুটা বেশি হয়। এছাড়া এই সময় আমরা শুধু যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। আসার সময় আমাদের গাড়ি ফাঁকা আসছে। কোনো যাত্রী থাকছে না।’
অন্যান্য লোকাল বাসের থেকেও ভাড়া বেশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য গাড়ি থেকে অর্ধেক সময়ে আমাদের গাড়ি ঘাটে পৌঁছাবে। সারা রাস্তায় যাত্রী তুলবে। আর আমরা এখান থেকে যাত্রী নেবো। সব আসন ফুল হয়ে গেলে একটানে ঘাটে চলে যাবো। আর কোথাও থেকে যাত্রী তুলবো না।’
আরেক লোকাল সার্ভিস বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজের চালকের সহকারী নুরুল বলেন, ‘ঘাটের ভাড়া ২০০ টাকা। ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। সাধারণ সময় যাত্রী পাওয়া যায় না, তাই কিছুটা কম নেওয়া হয়। কারণ ওদিক থেকে গাড়ি আসার সময় আবার যাত্রী আনলে গড়ে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এখন আসার সময় কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না। ঈদের সময় ভাড়া কম নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ভাড়া বেশি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে গাবতলী টার্মিনালে দ্বায়িত্বরত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভিজিলেন্স টিমের সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেবো। বর্তমানে আমাদের এককটি টিম অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অভিযান শুরু হবে।’
কেআর/ইএ/এমএস