তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, একরেম ইমামোগলু আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হবেন। কিন্তু তার সমর্থকদের জন্য এটি উদযাপনের মুহূর্ত নয়, বরং উদ্বেগের কারণ—কারণ ইমামোগলু এখন কারাবন্দি।
Advertisement
গত ২৩ মার্চ ইমামোগলুকে বিচারের আগ পর্যন্ত আটক রাখার নির্দেশ দেন একটি তুর্কি আদালত। এর ফলে তিনি মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর কারাগারে কাটাতে পারেন। আগামী ২৬ মার্চ তার স্থলে নতুন একজন মেয়র নির্বাচন করবে ইস্তাম্বুলের সিটি কাউন্সিল।
গণতন্ত্রের সংকটতুরস্ক এমন এক মোড়ের দিকে এগোচ্ছে, যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হতে পারে। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও দেশটি এমন এক শাসনব্যবস্থার মধ্যে ছিল, যেখানে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান নির্বিচারে ক্ষমতা প্রয়োগ করলেও নির্বাচনগুলো মোটামুটি অবাধ ও প্রতিযোগিতামূলক ছিল। কিন্তু, গত ১৯ মার্চ ইমামোগলুকে আটক করার পরপরই দৃশ্যপট বদলে যায়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাকেও গ্রেফতার করা হয়। এই পদক্ষেপের ফলে তুরস্ক প্রায় নগ্ন স্বৈরতন্ত্রের দিকে চলে গেছে।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
ইমামোগলুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা, দুর্নীতি ও সরকারি দরপত্র জালিয়াতি। বিরোধী দল ও স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার প্রার্থিতা রোধ করতেই সরকার তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বাতিল করেছে, যা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আবশ্যকীয় যোগ্যতা।
ব্যাপক বিক্ষোভ ও দমননীতিইমামোগলুর গ্রেফতারের পর থেকে তুরস্কজুড়ে ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে জলকামান ও টিয়ার গ্যাস, আটক করা হয়েছে ৩৪০ জনকে। এক সপ্তাহের জন্য জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং ইস্তাম্বুলে প্রবেশ ও বহির্গমন সীমিত করা হয়েছে।
ইমামোগলুর জনপ্রিয়তা ও এরদোয়ানের উদ্বেগ২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচনে এরদোয়ানের প্রার্থীকে পরাজিত করার পর থেকেই ইমামোগলু সরকারের টার্গেটে পরিণত হন। সে সময় প্রথমে তার বিজয় বাতিল করা হয়, কিন্তু দ্বিতীয়বার আরও বড় ব্যবধানে তিনি জয়ী হন। ২০২২ সালে তিনি আদালতে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন, যদিও আপিল প্রক্রিয়া চলছিল।
ইমামোগলু ধর্মনিরপেক্ষ দল সিএইচপির নেতা হলেও ধর্মপ্রাণ জনগণের মধ্যেও জনপ্রিয়, যা তাকে আরও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। তার প্রভাব ও ক্যারিশমা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এরদোয়ান তাকে অপ্রতিরোধ্য প্রতিপক্ষ মনে করেছেন এবং তাকে আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
Advertisement
ইমামোগলুর গ্রেফতারের ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্বে জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ইউরোপ তুরস্ককে ইউক্রেনের সম্ভাব্য শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিতে চাইছে, আর যুক্তরাষ্ট্রও এই ইস্যুতে নীরব রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এরদোয়ানের এই কঠোর পদক্ষেপ তার রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে, কিন্তু তুরস্কের গণতন্ত্রের জন্য এটি এক অশনি সংকেত। বিক্ষোভকারীরা এখনো রাজপথে। টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ার আড়ালে তুরস্কের গণতন্ত্র আরও অস্পষ্টতার দিকে যাচ্ছে।
কেএএ/