বিগত ১৬-১৭ বছর লুটেপুটে খেয়ে আওয়ামী লীগ দেশকে ফোকলা বানিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা মাওলানা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
Advertisement
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরের পথ-পরিক্রমায় বিগত ১৬-১৭ বছরের ভেতর যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা হলো রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আর জনগণের আমানত লুটেপুটে খাওয়া, বিদেশে বাড়ি করা, অর্থপাচার করা। মানে একেবারে গাছের আগারটাও খেয়েছে, তলারটাও কুড়িয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বিগত ১৬ বছরকে কালো অধ্যায় উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, জনগণের অর্থ লোপাট করার ‘নেম অব পলিটিক্স’ আমাদের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। ব্যাংক এবং ইন্সুরেন্স খাতে লুটপাট হয়েছে। এটা অতীতে আর কোনোদিন হয়নি। তারা দেশকে একেবারে ফোকলা বানিয়ে ফেলেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে বিচারপতি আব্দুর রউফের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হামদর্দ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
Advertisement
আরও পড়ুন
দেশে ধর্মীয় কোনো বৈষম্য নেই: ধর্ম উপদেষ্টাষড়যন্ত্রের কুশীলবরা নতুন এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামবে: ধর্ম উপদেষ্টাধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এখন আমাদের মাইন্ডসেট বদলাতে হবে। এদেশে আমাদের জন্ম, এদেশের মাটিতেই আমাদের কবর। এদেশকে ভালোবাসা আমাদের দায়িত্ব। দেশের সম্পদ যারা লুট করে, তারা কোনোদিন দেশপ্রেমিক হতে পারে না। আসুন মাইন্ডসেট বদলে ফেলি, দেশকে ভালোবাসি। দেশের মাটিতে রোপিত একটা বৃক্ষের পাতাও নষ্ট করার হক কারও নেই। এ মানসিকতা যতদিন আমরা না বদলাবো, ততদিন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবো না।
প্রয়াত বিচারপতি আব্দুর রউফের কথা ও কাজে মিল ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জামানায় কথা এবং কাজে মিল পাওয়া বড় মুশকিল। কিন্তু ওনার কথা এবং কাজে মিল ছিল, সুন্নতের অনুসরণ ছিল। ইসলামি অনুশাসনের চর্চা তার জীবন ও কর্মে প্রত্যক্ষ করেছি। যখনই মনে করেছেন, এখন আর দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়; দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কয়জন এমনটা পারে? খুব কম মানুষই পারে। এটা আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।
বিচারপতি আব্দুর রউফের সহজ, সরল, অনাড়ম্বর জীবনযাপন ও আদর্শের কথা তুলে ধরে আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, কাল বা জামানা এখন আর বিচারপতি আব্দুর রউফের মতো মানুষ তৈরি করবে না। জামানা এখন কৃপণ। যারা চলে যাচ্ছেন, তাদের আসন খালি থাকছে। একসময় জামানা অনেক বড় মানুষ তৈরি করেছে। এখন আর জামানা তেমন মানুষ তৈরির উপযুক্ত নয়। তিনি আদর্শের ভিত্তিতে কল্যাণরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ওনার জীবন-কর্মের ওপর যদি একটি ডকুমেন্টারি করা যায়, তাহলে তা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেবে।
Advertisement
স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন হামদর্দ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এবং স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান, জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ মুতাওয়াল্লি ড. হাকীম মো. ইউসুফ হারুন ভুঁইয়া।
বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুর রউফের পরিবারের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন মরহুমের বড় ছেলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আরশাদুর রউফ। তিনি বলেন, দেশের প্রতি আমার বাবার অগাধ ভালোবাসা দেখেছি। তিনি মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বাবার চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণাকে ধারণ করে আপনারা যদি এ প্রতিষ্ঠানকে আরও এগিয়ে নিতে পারেন, তাহলে তার আত্মা শান্তি পাবে।
হামদর্দদের তথ্য ও গণসংযোগ কর্মকর্তা আমিরুল মোমেনীন মানিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন শায়খ শাহ ওয়ালী উল্লাহ।
স্মৃতিচারণ করেন হামদর্দ ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, ওয়াকফ প্রশাসক মো. ফখরুল ইসলাম, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ, আবুল হোসেন খন্দকার প্রমুখ।
এএএইচ/এএমএ