ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারিকুলাম বিতর্ক করা ও সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নাম ব্যবহার করায় রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদুর রহমানকে এনসিটিবির কারিকুলাম কমিটি থেকে দ্রুত অপসরণসহ ৯ দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন।
Advertisement
একই সঙ্গে দাবি আদায় না হলে এনসিটিবি ভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর। এসময় তিনি ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, সম্প্রতি এনসিটিবির চেয়ারম্যান বিতর্কিত রাখাল রাহাকে নিয়ে দায়সারা বক্তব্য দেওয়ান। তার প্রতিবাদে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। গত স্বৈরশাসকের আমলে চালু করা গণবিরোধী নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল আপষহীন। ২০২৩ সালে শুরু করে দীর্ঘ সংগ্রামের এই পথ পাড়ি দিতে আমাদের অনেক ত্যাগের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ন্যায়ের পক্ষে থেকেও আমরা তৎকালীন সরকারের রোষাণলে পড়েছিলাম। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আমাদের অনেকে জেল খেটেছি। আন্দোলনের শুরুটা দু-একজন করলেও পরবর্তী সময়ে গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। ধীরে ধীরে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। দেশের শিক্ষিত জনসাধারণ সোচ্চার হয় সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তে। আমাদের আন্দোলনটি কোনো একক ব্যক্তির ফসল নয়। আমরা আন্দোলনে সম্মিলিতভাবে লড়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের নামকরণও হয়েছিল সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন।
Advertisement
তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নেতারা ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ দিতে গেলে রাখাল রাহা সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের অথরিটিকে অবগত না করেই এ সংগঠনের নামে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এ আন্দোলন তার নেতৃত্বে হয়েছিল বলে উপদেষ্টাকে জানান। এ সংগঠনের নাম ব্যবহার করে তিনি এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটির সদস্য সচিব নিযুক্ত হন এবং এনসিটিবিতে একক আধিপত্য কায়েমের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী গ্রাফিতি, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা বইয়ের পেছনে ছাপা, টেন্ডার কেলেঙ্কারী ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানাসহ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করতে থাকেন।
'রাখাল রাহা আমাদের সঙ্গে শেষ দিকে যুক্ত হলেও তিনি উল্লেখযোগ্য কএনা ভূমিকা পালন করেননি। উপরন্তু তিনি ঐতিহাসিক এ প্ল্যাটফর্মকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন যা শুধু আমাদের সঙ্গেই না, পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা।'
এসময় তিনি ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন:১) রাখাল রাহাকে এনসিটিবির সব কমিটি থেকে অপসারণ করে গণমাধ্যমে স্পষ্ট বিবৃতি দিতে হবে এবং তাকে হিরো বানিয়ে ভবিষ্যতে কোনোরূপ পুনর্বহাল করা যাবে না। তার মতো বিতর্কিত কাউকেই এনসিটিবির পরিমার্জন বা সংস্কার কমিটিতে যুক্ত করা যাবে না।
২) যেহেতু মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং কোর্ট থেকে আদেশ জারি হয়েছে, সেহেতু শর্ত ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমাদের জব্দকৃত সব মালামাল, সবার ফেসবুক আইডি এবং গ্রুপগুলো ফেরত দিতে হবে।
Advertisement
৩) প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবিলম্বে মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪) পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনে কোন কোন বিশেষজ্ঞ কোন কোন বিষয় পরিমার্জন করেছেন, কত টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন তার দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।
৫) পাঠ্যপুস্তক মূদ্রণে ২০২৩ সালে যেখানে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ০% এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাইনাস ভেরিয়েশনে কাজ পেলেও এবার কেনো ২০% বাড়িয়ে প্রাক্কলিত দর করে আরও ২০-২১% গড়ে অর্থাৎ ৪১% ওভার প্রাইসিং রেটে প্রেসগুলোকে কাজ দিয়েছে এবং এনসিটিবির সিন্ডিকেট কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে বলে অভিযোগ এসেছে, তার তদন্ত করতে হবে।
৬) পত্রিকায় এসেছে ৪০টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সিঙ্গেল বিডার হওয়ার পরও তাদের কোনোরূপ কম্পিটিশন না করিয়ে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ দিয়ে সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতি করেছে। তার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে।
৭) অবিলম্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও দেশীয় মূল্যবোধের আলোকে কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে।
৮) ইউনেস্কোর পরামর্শ, দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করতে হবে।
৯) যেসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখনো বই পায়নি, সেই বইগুলো আগামী ১০ দিনের মধ্যে দিতে হবে। অন্যথায় এনসিটিবি ঘেরাও করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সভাপতি কাজী সাইফুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, জেসমিন, ডা. রিপা, তানিয়া আক্তার, কামাল হোসেনসহ প্রমুখ।
কেআর/এমএইচআর/জিকেএস