রাজনীতি

সংস্কার-স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে

সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচন ইস্যু নিয়ে জনগণের সামনে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

Advertisement

তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি দেশের কৃষক শ্রমিক জনতা আলেম ওলামা পীর মাশায়েখ তথা সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো থেমে নেই।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। ‘সুদৃঢ় ঐক্যই রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র’ স্লোগানে সাত বছর পর শুরু হয়েছে বিএনপির বর্ধিত সভা।

আরও পড়ুন বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্ব বাড়ছে কেন? বিএনপির বর্ধিত সভা আজ, প্রাধান্য পাবে যেসব বিষয় নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন, কেউ বাধা হলে প্রতিহত করা হবে

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী। গণহত্যাকারী টাকাপাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।

Advertisement

তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান- সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়াচক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।

সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া

তারেক রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিএনপির কাছে সংস্কারের ধারণা নতুন কিছু নয়। সরকারে কিংবা বিরোধী দলে বিএনপি যখন যে অবস্থানেই দায়িত্ব পালন করেছে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব সময়েই রাষ্ট্র সরকার ও রাজনীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে এবং করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’ ‘তবে ষড়যন্ত্রের পথ ধরে পলাতক স্বৈরাচার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর সংস্কারের সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশকে চিরতরে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে গত দেড় দশকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিলো। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছিল। টাকাপাচার আর লুটপাট চালিয়ে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করে দিয়েছিলো। অকার্যকর করে দেয়া হয়েছিল দেশের সব সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সরকার এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বিএনপি ২৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ঘোষণা করা হয় ৩১ দফা কর্মসূচি। এই ৩১ দফা নিয়ে বর্তমানে বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে জনগণের সঙ্গে সংলাপ চলছে। রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল মেরামতের জন্য দফা ৩১টি হলেও এর চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি। সেটি হলো একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ঠিক তেমনি উদ্দেশ্যও একটি। সেটি হলো রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিত করা না গেলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্র-নিরাপত্তা-সমৃদ্ধি কোনোটিই টেকসই হবে না। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনোই বিকল্প নেই। রাষ্ট্র এবং সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এবং এ লক্ষ্যেই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি আজ এবং আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপির এই ৩১ দফা হচ্ছে, একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সনদ। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফাতেও সংযোজন-বিযোজনের সুযোগ রয়েছে। এমনকি বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবনার খুব বেশি ইস্যুতে মৌলিক বিরোধ নেই।

স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন

তারেক রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না।’ ‘সারাদেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করতে চাইছে এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।’

Advertisement

তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী। গণহত্যাকারী টাকাপাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, সারা দেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়াচক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ সংশয়ের সৃষ্টি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এ পর্যন্ত ১৬/১৭টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সব নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। সুতরাং, প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে। দেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আরো সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।

বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমি আপনাদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও যোগাযোগ এবং কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে আমি কখনোই আপনাদের কাছ থেকে দূরত্ব অনুভব করিনি। আমার মনে হয়, এখানে উপস্থিত এমন একজনকেও পাওয়া যাবে না যার সঙ্গে আমার অন্তত একবার হলেও কথা হয়নি। কিংবা টেক্সট মেসেজ আদান প্রদান হয়নি। তবে আজ এখানে সবাইকে একত্রে পেয়েছি। আপনাদের অভিনন্দন। আমি বিশ্বাস করি যে দলে আপনাদের মতো ত্যাগী এবং সাহসী নেতাকর্মী রয়েছে সেই দলকে কোনো স্বৈরাচারই দমিয়ে রাখতে পারে না।’

আমাদের একটিই পরিচয় আমরা বাংলাদেশি

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যে দেশে মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান তথা দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বসবাসকারী আমাদের সবার একটিই পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। বিএনপি মনে করে বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু মিত্র বলে কিছু নেই। বরং একটি দেশের সঙ্গে অপর দেশের সম্পর্ক হবে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা, প্রয়োজন এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের নীতি ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। অর্থাৎ নিজ দেশ এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষাই হতে হবে প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার।

‘এই মুহূর্তে বিএনপিই দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল’ উল্লেখ করে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির কাছে জনগণের যেমন আশা ভরসা প্রত্যাশা রয়েছে। একইসঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাও থেমে নেই। সুতরাং, চক্রান্তকারীদের মোকাবেলা করে কিভাবে দলকে আরো শক্তিশালী এবং সুসংহত করা যায় আমি আশা করি আপনাদের আলোচনায় সেই সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে।

বক্তব্য দেয়ার সময় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ

তারেক রহমান বলেন, সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষক-শ্রমিক দরিদ্র-মেহনতি-স্বল্প আয় কিংবা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত-পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রী তরুণ তরুণী তথা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বার্থ রক্ষা এবং জীবন মানোন্নয়নে আপনাদের নিজ নিজ এলাকাভিত্তিক কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় আশা করি আপনাদের বক্তব্যে সেসব বিষয়ও থাকবে। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পক্ষে বিপক্ষে অবশ্যই আপনারা সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরবেন। তবে একটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই সেটি হলো বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার। এই পরিবারের নানাবিষয়ে আমাদের মতের অমিল থাকতেই পারে। সুতরাং বক্তব্য দেয়ার সময় ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিরোধকে এড়িয়ে যাওয়া বাঞ্চনীয় বলেই আমি মনে করি।

‘আমরা সবাই আমাদের ঐক্যের শক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত। ঐক্যই আমাদেরকে বারবার বিজয় আর সফলতা এনে দিয়েছে। সুতরাং আমাদের খেয়াল রাখা জরুরি আলোচনা সমালোচনা যেন নিজেদের মধ্যকার ঐক্য বিনষ্টকারী কিংবা দলের ক্ষতির কারণ না হয়। আরো একটি বিষয়ে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নেতানেত্রীদের সম্পর্কে আপনারা বক্তব্য দেয়ার সময় দয়া করে প্রশংসাসূচক শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা, বুদ্ধিমত্তা এবং পরিমিতি বোধের পরিচয় দেবেন।’ বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান

দেড় লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গত দেড় দশকে সারাদেশে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ভিন্ন দল এবং মতের নেতাকর্মীদের অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। কেবল বিএনপিরই ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড় লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলমের মতো অনেক নেতাকর্মীর আজ পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। শুধু বিএনপি করার অপরাধে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থককে গুম খুন অপহরণ করা হয়েছে। তবু বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ দল ছেড়ে যাননি। স্বৈরাচারের সঙ্গে করেননি আপস।

আচার-আচরণে হতে হবে আরো সতর্ক ও সংযত

তারেক রহমান বলেন, আপনাদের এই সৎসাহস এবং সততার কারণে বিএনপি আজ শুধু একটি সাধারণ রাজনৈতিক দলই নয়। দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ বিএনপিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড হিসেবে বিশ্বাস করে। এটি একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি।

এ কারণেই দলের সর্বস্তরের প্রতিটি নেতাকর্মীকে আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আচার-আচরণে হতে হবে আরো সতর্ক ও সংযত। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোটি কোটি নেতাকর্মী সমর্থকদের এই বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতাকর্মী হয়তো নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তাই আমি আপনাদের আবারো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি বার্তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।

শহীদ জিয়া বলেছিলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দলের প্রতি আপনার, আপনাদের প্রতিটি নেতাকর্মীর দীর্ঘ দিনের সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। তারপরও যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হবেন ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমাকে বাধ্য হয়েই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা দলের ইমেজ ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজকে বিএনপি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবে না।

জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন

তারেক রহমান বলেন, জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। বিএনপি জনগণকে বিশ্বাস করে। জনগণও বিএনপিকে বিশ্বাস করে। সুতরাং আপনার প্রতি, আপনাদের প্রতি, বিএনপির প্রতি জনগণের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং বিএনপি সমার্থক। দেশে গণতন্ত্র থাকলে বিএনপি থাকে। গণতন্ত্র বিপন্ন হলে বিএনপির স্বার্থও বিপন্ন হয়। মাফিয়া প্রধানের পলায়নের পর দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। আপনারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন।

শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ থাকুন

তারেক রহমান বলেন, আমি গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বার্তা দিতে চাই, বিএনপি শুধু আপনাদের ভোটের পুনরুদ্ধারই নয়, আপনার ভোটের প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যে সরকার আপনার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমি জনগণের সমর্থন চাই, সবার সহযোগিতা চাই। সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভার্থীদের প্রতি আহ্বান, আপনারা শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ থাকুন।

কেএইচ/বিএ/এমএমএআর