বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের ৫ শতাংশই ইউক্রেনের হাতে আছে বলে মনে করা হয়। দেশটিতে ১৯ মিলিয়ন টন গ্রাফাইটের মজুত আছে। এটি ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ইউরোপে যত লিথিয়ামের মজুত আছে তার এক তৃতীয়াংশই ইউক্রেনে। ব্যাটারি তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটি।
Advertisement
তিন বছর আগে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের আগে বিশ্বে যত টাইটানিয়াম উৎপাদন হতো তার ৭ শতাংশ আসতো ইউক্রেন থেকে। এটি উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত সবকিছুতেই ব্যবহৃত হয়।
ইউক্রেনের ভূমিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিরল খনিজের মজুত আছে। ১৭টি উপাদানের এসব খনিজ অস্ত্র উৎপাদন, বায়ু টারবাইন, ইলেকট্রনিক্সসহ আধুনিক বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
এর মধ্যে কিছু খনি রাশিয়া দখল করেছে। ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিদেঙ্কোর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, অন্তত সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রাশিয়ান অধিকৃত এলাকায় আছে।
Advertisement
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার বিষয়ক চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন।
জেলেনস্কি যদিও এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তিকে প্রাথমিক হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, তিনি চান যে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হোক। এর ফলে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর নতুন করে কোনো আগ্রাসন চালালে তা প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘খুব বেশি’ নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেবে না বরং ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেওয়ার এই দায়িত্ব ইউরোপের নেওয়া উচিত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনাকেও একপ্রকার নাকচ করে দিয়েছেন। যদিও এটি পাওয়া জেলেনস্কির দীর্ঘদিনের একটি লক্ষ্য।
Advertisement
গত বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ক্যাবিনেটে বলেন, বিরল খনিজ পদার্থ উত্তোলন করতে ইউক্রেনের মাটিতে মার্কিন কর্মীদের উপস্থিতিই ইউক্রেনকে ‘স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা’ দেবে।
ট্রাম্প বলেন, কিয়েভকে ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার চিন্তা ‘ভুলে যেতে’ হবে। এসময় তিনি রাশিয়ার দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেন যে এই বিষয়টিই যুদ্ধ শুরুর অন্যতম কারণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট একটি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, মানুষ মারা বন্ধ করতে আমরা রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করবো।
এদিকে জেলেনস্কি বলেছেন, নিরাপত্তা গ্যারান্টি ছাড়া আমরা যুদ্ধবিরতিতে যাবে না। এতে কিছুই কাজ করবে না, কিছুই সফল হবে না। তিনি বলেন, আমি ন্যাটো বা তার অনুরূপ কোনও পথের সন্ধান পেতে চাই।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের বিরোধিতা করে আসছে। কারণ রাশিয়া মনে করে, এটি হলে ন্যাটোর সামরিক বাহিনী রাশিয়ার সীমান্তের খুব কাছাকাছি চলে আসবে। বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জোট ন্যাটো ২০০৮ সালে বলেছিল ইউক্রেন এতে যোগ দিতে পারে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
জেলেনস্কি বলেছেন, খনিজ সম্পদ চুক্তির সাফল্য নির্ভর করবে চলতি সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্ড়ে তার বৈঠকের ফলাফলের ওপর। বুধবার সন্ধ্যায় তার সরকারও এতে সমর্থন দিয়েছে।
চুক্তির বিস্তারিত এখনও প্রকাশ হয়নি। তবে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস স্মিহাল বলেন, এই চুক্তিতে ইউক্রেনকে পুনর্গঠনের জন্য একটি বিনিয়োগ তহবিল আছে। গত বছর এই চুক্তির বিষয়টি সর্বপ্রথম প্রস্তাব করেছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেই যেন ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাস্তব কোনো কারণ থাকে।
প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের কাছ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদ চাইলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ওই দাবি এখন বাদ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের কঠোর বাণিজ্যনীতি, আমেরিকায় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি আমেরিকায় ডিমের দামে সর্বকালের রেকর্ড, বাড়তে পারে আরওএখন দুই পক্ষ চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছে। ডোনাল্ড ত্রাম্প এটিকে ‘খুব বড় চুক্তি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এতদিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল সেগুলো ফেরত পাবার সুযোগ এটি। কিন্তু জেলেনস্কি এটিকে ‘ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি’ বলছেন। এর মাধ্যমে ভিত্তিতে তিনি আরও চুক্তি করতে চান।
টিটিএন