দেশজুড়ে

সাজেকে স্থাপন হবে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত ইউনিট

সাজেক ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত একটি ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।

Advertisement

তিনি বলেছেন, ‘সাজেক ভ্যালিতে ফায়ার সার্ভিসের একটি বিশেষ ইউনিট স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবো। এখানে যে পানির সমস্যা সেটার নিরসন নিয়েও কাজ করা হবে। সাজেকে আগুনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের এই এলাকায় কিছু হওয়া মানে অর্থনীতিতে কী পরিমাণ ক্ষতি, সেটা অনুমাণ করতে পারছি না।’

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এখানে কটেজ মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের করপোরেট লোনের ব্যবস্থা করে দিতে বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করবো। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য কীভাবে খাবারের ব্যবস্থা করা যায় সেটা নিয়েই চিন্তা-ভাবনা করছি। ঢাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিছু চাল-ডাল পাঠিয়ে দেবো।’

Advertisement

এসময় তার সঙ্গে উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, সাজেক ভ্যালিতে আগুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোবারক হোসেন, কমিটির সদস্যসচিব ও বাঘাইছড়ির ইউএনও শিরীন আক্তার, সাজেক কটেজ-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মন, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কমিটির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন

এর আগে সাজেকের রুইলুই এলাকায় ভয়াবহ আগুনের উৎস উদ্ঘাটন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান সদস্যদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেন। তবে আগুনের উৎস সম্পর্কে তদন্ত কমিটি কিছু জানাতে পারেনি। তারা ধারণা করছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও রাঙামাটি জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, ‘ইকো ভ্যালি রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এবং এটার সম্ভাব্য অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা সিগারেটের আগুন থেকে সাজেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা হতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবগুলো কারণ খতিয়ে দেখা হবে।

Advertisement

প্রশাসনের সহায়তা

সাজেক ভ্যালিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫টি ত্রিপুরা ও লুসাই পরিবারকে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সাজেক ভ্যালির শিব মন্দির প্রাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন রাঙামাটি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. মোবারক হোসেন। এসময় বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কমিটির সদস্য সচিব শিরীন আক্তারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ত্রাণ সহায়তা হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে নগদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল, শুকনো খাবার ও কম্বল দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত রিসোর্ট-কটেজ মালিকদেরও নগদ ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

বাঘাইছড়ির ইউএনও ও তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব শিরীন আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আপাতত আর্থিকসহ নানা সহায়তা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কেউ বাদ পড়লে তাদেরকেও সহায়তা করা হবে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাজেক ভ্যালিতে ভয়াবহ আগুনে কটেজ-রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও স্থানীয়দের বসতবাড়িসহ ৯৫টি স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরমধ্যে ৩৫টি বসতঘর স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুরাদের। গত দুদিন আগুনে বসতঘর হারিয়ে লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রায় ২ শতাধিক মানুষ গির্জা ও মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন।

এফএ/এএসএম