ফিচার

সূর্যমুখীর হাসিতে বদলে গেলো ময়লার ভাগাড়

সবুজের মাঝে এ যেন হলুদের রঙছটা। প্রকৃতিতে সামান্য বাতাসেই হেলেদুলে নেচে যাচ্ছে হাজারো সূর্যমুখী। তবে এটি কোনো ফসলের মাঠ নয়, পুরোনো একটি ময়লার ভাগাড় আর ঝোপঝাড় সরিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে করা হয়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। আর সূর্যমুখী ফুলের নয়াভিরাম দৃশ্য দেখতে কেউ আসছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আবার কেউ আসছেন পরিবার পরিজনদের নিয়ে। অনেকে তো আবার হাজির হয়েছেন ফটোগ্রাফার নিয়েও। তাই সময় ক্ষেপণ না করে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো করে ফেলছেন ফ্রেমবন্দি।

Advertisement

পৌরসভা সূত্র ও স্থানীয়রা জানায়, শরীয়তপুর পৌরসভার মূল গেটে শহরের প্রধান সড়ক লাগোয়া স্থানটি ছিল পৌরসভার সেকেন্ডারি ডাম্পি জোন। এখানে শহরের বাসাবাড়ির ময়লার স্তুপ করে রাখার পর পরবর্তীতে পৌরসভার গাড়ির মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হতো প্রধান ডাম্পিজোনে। বছরের পর বছর ধরে জায়গাটিতে রাখা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে পৌরসভায় প্রবেশ কিংবা প্রধান সড়ক দিয়ে যাওয়া মুশকিল ছিলো পথচারীদের।

কয়েক মাস আগে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিংকি সাহাকে পৌর প্রশাসক নিযুক্ত করা হলে তিনি উদ্যোগ নিয়ে ময়লার ডাম্পি জোনকে সরিয়ে গড়ে তুলেন গ্রীণ স্পেস। প্রায় ৪৪ শতক জমিতে আবাদের পরিকল্পনা নেন সূর্যমুখীর। নিবিড় পরিচর্যার ফলে ফোটা শুরু হয় সূর্যমূখী ফুল। শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন সূর্যমুখীর ফুলের সৌন্দর্যে প্রতিনিয়ত সকাল-বিকাল ভিড় করছেন নানা বয়সি শ্রেণি পেশার মানুষ। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।

রোজানা ইসলাম রোজী নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘পৌরসভা সামনে দিয়ে একটা সময় হেটে যাওয়া যেত না ময়লার দুর্গন্ধে। শহরের মধ্যে এত সুন্দর একটা পরিকল্পনা নিয়ে ময়লা সরিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করা যায় যা আমরা চিন্তা করিনি। বর্তমানে জায়গাটি একটি বিনোদন কেন্দ্রের মত হয়ে উঠেছে। সবাই আসে, ঘুরে ছবি তুলে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগে আমরা সবাই খুব খুশি।’

Advertisement

সৌরভ নামের আরেক যুবক বলেন, পৌরসভার এই জায়গাটি ময়লা আবর্জনা পড়েছিল। পৌরসভা উদ্যোগ নিয়ে সেই ময়লা আবর্জনা সরিয়ে সুন্দর সূর্যমুখীর আবাদ করেছে। এই সূর্যমুখী থেকে তেলও পাওয়া যাবে আবার আমরা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছি। অনেকের পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে, পৌরসভার এমন উদ্যোগ দেখে তারাও এই উদ্যোগ নিতে পারে।’

আয়েশা নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে এইদিক দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি অনেক সুন্দর সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে। আজ আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। ফুলের সঙ্গে ছবি তুলে বেশ ভালো লাগলো। আমরা সেই আগামীতেও এখানে সূর্যমুখীর চাষ করা হোক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, ‘সূর্যমুখী তেল মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। অন্যান্য তেলের পাশাপাশি এই সূর্যমুখী তেলও আমাদের কাজে আসে। তাই আমরা সব সময় কৃষকদের সূর্যমুখী আবাদ করার পরামর্শ দেই।’

জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসক পিংকি সাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি সেকেন্ডারি ডাম্পিং জোন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। পৌরসভা যেহেতু একটি নাগরিক সেবাকেন্দ্র তাই আমি প্রথমেই জায়গাটিকে গ্রীণস্পেস হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেই। পরবর্তীতে সূর্যমুখী আবাদ এবং নিবিড় পরিচর্যা করা হয়। বর্তমানে খুব সুন্দর ফুল ফুটেছে। আমাদের পৌরবাসীসহ অন্যান্যরা এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন। পৌরবাসীর জন্য বিনোদনের সুযোগ করতে পারায় আমরা অনেক খুশি।’

Advertisement

আরও পড়ুন গ্রন্থাগার: হারানো স্বপ্নের আলোতে জ্ঞান অন্বেষণ বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ৫ জনের জীবন কেমন ছিল

কেএসকে/এএসএম