শিক্ষা

একটু ভালো রেজাল্ট করলেই প্রচুর ফান্ডিং পাওয়া যায়

সাহিত্য, সামাজিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল, দর্শন, বিজ্ঞান, সঙ্গীত… কত বিচিত্র বিষয়ের বিভাগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে পড়বে, কোন বিষয়ে পড়ে পছন্দের ক্যারিয়ারটি সে বেছে নিতে পারবে- এই বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাদের প্রয়োজন বিস্তারিত তথ্য আর অল্প কিছু টিপস্। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে জানছি। ইতিহাস বিভাগ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে আলোচনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. এমরান জাহান।

Advertisement

জাগো নিউজ: একজন শিক্ষার্থী ইতিহাসে পড়তে আগ্রহী হবেন কেন?

অধ্যাপক এমরান জাহান: জ্ঞান অর্জনের জন্য ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট। কারণ আমরা যে বিষয়েই পড়ি না কেন, সেখানে ইতিহাস সংযুক্ত আছে। কম্পিউটার সায়েন্সেরও একটি ইতিহাস আছে, ফিজিক্সেরও একটি ইতিহাস আছে। এটি গেলো ইতিহাস পাঠের একটি দিক।

আরেকটি দিক হলো, প্রত্যেকটি মানুষের উচিত তার জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে জানা। ওই মানুষটি কে, সে কোথা থেকে এসেছে, তার নৃতাত্ত্বিক পরিচয় কী, তার ভাষা কী, ভাষার পরিচয়টা কী, তার ভাষার উদ্ভবটা কীভাবে হয়েছিল- এ বিষয়গুলো ইতিহাস থেকে জানতে পারবেন। এছাড়া একটি এলাকার প্রকৃতি, ফসলাদির ইতিহাস, কোন ফসল ভালো হয়- এসব জানার জন্যও আমরা ইতিহাস পড়ি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তাই। বিশ্বের ইতিহাস পড়তে হয়। বিশ্বের যুদ্ধগুলো পড়তে হয়। ব্যক্তিগত জীবনে যুদ্ধ সম্পর্কে জানা সবার প্রয়োজন না হলেও যুদ্ধ কেন হয়েছিল এবং তার ফলাফল কী, সাধারণ জনগণের ওপর তার কী প্রভাব পড়ে, এসব জানার জন্য ইতিহাস পড়তে হয়।

Advertisement

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন আছে। সেটি হলো- আমি যদি কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষ হই, তাহলে ওই অঞ্চলের ইতিহাস জানা আমার জন্য খুব দরকারি। ওই অঞ্চলের মানুষকে যদি আমি প্রশাসনিক আওতায় আনতে চাই, সেখানকার কৃষি ও জীবনব্যবস্থার উন্নতি করতে চাই, তাহলে আঞ্চলিক ইতিহাসটা জানতে হবে।

জাগো নিউজ: জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ তো অবশ্যই আছে। এর বাইরে ক্যারিয়ার বা পেশাগত সুযোগ বিষয়ে একটু বলবেন?

অধ্যাপক এমরান জাহান: অবশ্যই। আমাদের শিক্ষার্থীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকে যে ইতিহাস পড়ে কী হবে? ক্যারিয়ার কীভাবে গড়ে তুলবো? এ বিষয়ে আমার একটা পর্যবেক্ষণ আছে। তা হলো- বাংলা ও ইতিহাসের শিক্ষার্থীরা কখনো বেকার বসে থাকে না।

প্রথমত, ইতিহাস এমন একটি বিষয়, যার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা জাতীয় বিষয়গুলো জড়িত। ফলে ইতিহাস পড়ার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী চাকরির ইন্টারভিউতে এ ধরনের বিষয়গুলোতে চমৎকারভাবে উত্তর দিতে পারে। এমনকি বিসিএস পরীক্ষায়ও এ বিষয়গুলোর প্রয়োজন পড়ে।

Advertisement

দ্বিতীয়ত, আমি আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই যে গত বছরের বিসিএসে আমাদের বিভাগ থেকে সাতজন শিক্ষা ক্যাডারে ও একজন ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছেন। এবং এই শিক্ষার্থীরাই আমাদের জানিয়েছেন যে, ইতিহাস বিষয়ে বিস্তারিত জানা থাকার কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক থেকে হওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে তাদের সুবিধা হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরেও আমাদের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো করেন, এমনকি কমার্সের শিক্ষার্থীদের চেয়েও ভালো করেন অনেক সময়।

তৃতীয়ত, চাকরির ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস সাবজেক্টটি আছে। ফলে বড় একটা সংখ্যার শিক্ষার্থী এখান থেকে পাস করে শিক্ষকতা পেশায় যেতে পারেন। এজন্যও ইতিহাস বিষয়টি আকর্ষণীয়। অনার্স-মাস্টার্সে ভালো রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা যাবে।

জাগো নিউজ: গবেষণা ও উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিহাসের শিক্ষার্থীদের সুযোগ কেমন?

অধ্যাপক এমরান জাহান: এ বিষয়টি স্কলারশিপের জন্য খুব ভালো। বিশেষ করে সাউথ এশিয়ায় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, যেমন ভারত, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তান- শিক্ষার্থীরা সেখানে স্কলারশিপসহ উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারে। এজন্য প্রয়োজন একটু ভালো রেজাল্ট আর ইংরেজি ভালো জানা। ইতিহাস ডিগ্রিটা নেওয়ার পরে দেশের বাইরে যে একজন শিক্ষার্থী শুধুই এই বিষয়েই পাড়তে যাবে তা নয়, সেখানে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ওয়ার্ল্ড সিভিলাইজেশন এবং আর্কিওলজিতেও সে উচ্চতর শিক্ষা নিতে পারবে। তুর্কিতে ভালো ফান্ডিংও পাওয়া সম্ভব। আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী পিএইচডি করছে সেখানে। ইরানেও ভালো সুযোগ আছে।

জাগো নিউজ: চাকরি পাওয়ার পর ভালো করার জন্য ইতিহাসের জ্ঞান কীভাবে কাজে লাগে?

অধ্যাপক এমরান জাহান: যে কোনো চাকরির ক্ষেত্রেই ভালো করতে হলে ইতিহাসটা জানা জরুরি। লক্ষ্য করে দেখুন, এদেশে ২০০ বছর ইংরেজরা শাসন করে গেছে। তাদের দৃষ্টিকোণ থেক দেখলে এই ২০০ বছরের শাসনে আমলারা কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। উইলিয়াম উইলসন হান্টার, জেমস্ টেইলর, হারবার্ট হোপ রিজলি, হেনরি রামসে- তারা সবাই কিন্তু দক্ষ আমলা ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই এ দেশে এসে আগে এই দেশের আঞ্চলিক ইতিহাসটা জেনে নিয়েছেন। যেমন ঢাকায় এসে জেমস টেইলর ‘টপোগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স অব ঢাকা’ (১৮৪০) লিখেছেন। তারপর রিজলি লিখেছেন আমাদের কাস্ট বা বর্ণপ্রথা নিয়ে। অর্থাৎ ইতিহাস একটা মাদার সাবজেক্ট। ইতিহাস কেন্দ্র করেই পলিটিকাল সায়েন্স, আইআর, প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা ও ওয়ার্ল্ড সিভিলাইজেশনের উদ্ভব।

জাগো নিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছেন এমন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলতে চান?

অধ্যাপক এমরান জাহান: উচ্চতর গবেষণার জন্য ইতিহাস অনেকগুলো রাস্তা খুলে দেয়। সম্প্রতি আমি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপরই আমার একজন সাবেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি, যে এখন পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত। আমি তাকে বলেছি যে তুমি যদি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাও আমি এটার সুযোগ করে দেব এবং ফান্ডিংও পাবে। কাজেই ইতিহাসে একটু ভালো রেজাল্ট করতে পারলেই উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রচুর ফান্ডিং পাওয়া যায়। একই সঙ্গে দেশে কাজের সুযোগ তো আছেই। তাই মানবিক শাখা থেকে যারা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছেন তাদের আমি বিশেষভাবে বলবো ইতিহাস বিষয়টি নির্বাচন করার জন্য।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয় নির্ধারণ করবেন কীভাবে কৃষিবিজ্ঞানে অনার্স, চাকরি কোথায় কী আশায় পড়বো আইন?

এএমপি/এএসএম